জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পক্ষে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেল ৩টার দিকে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাটের পশ্চিমে মেঘনা নদীর পাড়ে হাইমচর উপজেলার মাঝিরচর এলাকায় থেমে থাকা একটি জাহাজ থেকে পাঁচজনের মরদেহ এবং তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে আরও দুইজন মারা যান। আহত জুয়েলকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
নিহত সাতজন হলেন- নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এগারনলি এলাকার আবেদ মোল্লার ছেলে সালাউদ্দিন (৪০), একই উপজেলার পাংখারচর উত্তর এলাকার মাহবুবুর রহমান মুন্সীর ছেলে আমিনুর মুন্সী (৪১), ফরিদপুরের কোতোয়ালি উপজেলার জুয়াইর এলাকার মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে মো. গোলাম কিবরিয়া (৬৫), একই এলাকার মৃত আতাউর রহমানের ছেলে শেখ সবুজ (২৭), মাগুড়ার মোহাম্মদপুর উপজেলার চর বসন্তপুর এলাকার আনিছ মিয়ার ছেলে মো. মাজেদুর (১৮), একই উপজেলার পলাশবাড়িয়ার দাউদ হোসেনের ছেলে মো. সজিবুল ইসলাম (২৯) এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দেলোয়ার হোসেন মুন্সীর ছেলে রানা কাজী (৩২)। তারা সবাই জাহাজের স্টাফ।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যা। তা না হলে এভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হতো না। আমরা এর বিচার চাই।
নৌ পুলিশের এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনা শোনার পরই জাহাজে যাই। সেখানে গিয়ে যে আলামতগুলো জাহাজ থেকে উদ্ধার করেছি তার পারিপার্শ্বিক অবস্থানগুলো আমরা দেখেছি। এটি ডাকাতির ঘটনা নয়। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটি একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। জাহাজের ভেতর প্রত্যেকটি রুমে আহত ও নিহত দেহগুলো দেখতে পাই। তাদেরকে দেশীয় অস্ত্র দ্বারা মাথায় ও গলায় আঘাত করা হয়েছে। এর থেকে মনে হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড এবং পূর্বপরিকল্পিত। এই ঘটনায় আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু ক্লু পেয়েছি। এগুলো তদন্তের স্বার্থে এখন বলতে পারছি না। এসব ক্লু নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। জাহাজে আটজন ছিলেন। তাদের মধ্যে সাতজন মারা গেছে। একজন আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার অবস্থা মোটামুটি ভালো। তিনি সুস্থতার দিকে। আমরা আশা করি তার সঙ্গে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কথা বলতে পারব। তিনি একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। আমাদেরকে মূল তথ্যগুলো তিনি দিতে সক্ষম হবেন। নিহতদের মধ্যে কোনো এক পরিবারের সদস্য বাদী হয়ে হাইমচর থানায় একটি মামলা করবেন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, এ ঘটনায় চাঁদপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ১০ কার্যদিবসের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বলেন, আমাদের তদন্তকারী সংস্থাগুলো আলাদাভাবে তদন্ত করবে। এ ছাড়া আমাদের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কোস্ট গার্ডের স্টেশন কমান্ডারকে দিয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই তদন্ত রিপোর্ট আমাদের দেবেন। কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। আমরা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং শিপিং কর্পোরেশনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাকে কথা দিয়েছেন তারা এই নিহত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবেন। এই ঘটনায় আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। নদীতে আরও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে।