জার্মানিতে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের দলকে ছোট ব্যবধানে হারিয়ে নির্বাচনে জিতেছে মধ্য বামপন্থি দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এসপিডি। দলটি ২৫.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্য দিকে ২৪.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন অব জার্মানি বা সিডিইউ ও তার শরিক দল। তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও দলগতভাবে ভোটে সবচেয়ে ভালো করেছে গ্রিনস। তারা পেয়েছে ১৪.৮ শতাংশ ভোট যা দলটির ইতিহাসে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি। ১১.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে এফডিপি। কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠন করতে হলে একটি জোট করতে হবে। এতে নতুন চ্যান্সেলর কে হবেন, তা জানতেও অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে অভিবাসনবিরোধী ওলাফ শলৎজ এলেই পালটে যাবে জার্মাননীতি। এসপিডি সরকার গঠনের জন্য জোট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করছে। ২০০৫ সাল থেকে ১৬ বছর ধরে শাসনক্ষমতায় আছে চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মার্কেলের দল সিডিইউ। এদিকে, ভোট দিতে গিয়ে ভুল করেছেন চ্যান্সেলর প্রার্থী অরমিন লাশেট। এএফপি, বিবিসি ও ডয়েসে ভেলে।
পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গ্রিন পার্টি এবং এফডিপির সঙ্গে এসপিডির জোট গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও দল দুটি রক্ষণশীলদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে বলেও আভাস পাওয়া গেছে।এসপিডির প্রার্থী ওলাফ শলৎজকে পরবর্তী চ্যান্সেলর করার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক লার্স ক্লিংবেইল এআরডি গণমাধ্যমকে বলেছেন, এসপিডি প্রথম স্থানে রয়েছে। নির্বাচনে আমরা জিতেছি। আর সরকার গঠনের জন্য গ্রিন পার্টি এবং এফডিপির সঙ্গে আলোচনা হবে জানিয়ে এসডিপি নেতারা পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে সোমবার বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন।
৬৩ বছর বয়সি ওলাফ শলৎজ জোট গঠনে সফল হলে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে তিনি হতে পারেন এসপিডির চতুর্থ চ্যান্সেলর। আঞ্জেলা মার্কেলের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শলৎজ একসময় হামবুর্গের মেয়র ছিলেন। তবে সিডিইউয়ের প্রার্থী ৬০ বছর বয়সি আরমিন লাশেট এখনো নিজের চ্যান্সেলর হওয়ার সুযোগ দেখছেন। জার্মানির নতুন সরকার পররাষ্ট্রনীতির বিষয়গুলোতে কিভাবে জড়িত হয়, তার ওপরই ইউরোপ এবং অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বার্লিনের সম্পর্ক নির্ভর করবে। আর তা স্পষ্ট হতে কয়েক মাস লাগবে।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিজয়ের পর জার্মানিতে এসপিডির আবারও ফিরে আসার মধ্য দিয়ে ইউরোপের কিছু অংশে মধ্য-বামপন্থিদের অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য পুনরুত্থান ঘটার একটি ধারণা পাওয়া যায়। এ মাসের শুরুতে নরওয়েতেও মধ্য-বামপন্থিরা নির্বাচনে জয়লাভ করেছে।
এসপিডির নেতা ওলাফ শলৎজ বলেছেন, সরকার গঠনে তার দল ভোটে স্পষ্ট রায় পেয়েছে। সমর্থকরা ব্যাপক উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ওলাফ শলৎজকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। পরে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ওলাফ শলৎজ বলেছেন, ভোটাররা একটি ‘বাস্তবধর্মী সরকার’ গঠনে তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। অন্য দিকে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের আশীর্বাদপুষ্ট সম্ভাব্য উত্তরসূরি আরমিন লাশেট বলেছেন, সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই জয়ী হওয়া যাবে না। পুরো বিষয়টা এখন অঙ্গের হিসাব।
জোট গড়তে ঝাঁপাবেন আরমিন লাশেটও : শলৎজের দল সরকার গঠনের দাবি করেছে। আবার এসপিডির থেকে কম ভোট পেলেও সিডিইউ ও সিএসইউও সরকার গঠনের চেষ্টা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। জার্মানিতে অনেক সময়ই জোট নিয়ে আলোচনায় বেশ কিছুটা সময় লাগে। সিডিইউ, সিএসইউ ও এসপিডি এর আগেও জোট করে সরকার চালিয়েছে। তারা একসঙ্গে এলে সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু তারা যেহেতু আলাদা আলাদাভাবে সরকার গঠনের চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে, তাই তারা গ্রিন এবং এফডিপির সঙ্গে জোট নিয়ে কথা বলবে।
দুই বড় দলই গ্রিন ও এফডিপির সঙ্গে মিলে জোট করতে পারলে সরকার গঠন করতে পারবে। গ্রিন পার্টি যদি এসপিডির সঙ্গে জোট গঠনে রাজি হয়, তাহলে গ্রিন পার্টি থেকে কেউ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন। এর আগে ’৯০-এর দশকে এসপিডির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় জোটে জোসকা ফিশার যেমনটা হয়েছিলেন।
ভোট দিতে গিয়ে ভুল করলেন চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী লাশেট : লাশেট এমনভাবে ব্যালট ভাঁজ করে বাক্সে ফেলেছেন যে, সবাই দেখতে পেয়েছেন তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন। লাশেট যে নিজের দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন, তা সহজবোধ্য। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে ভোটদান হয় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে। জার্মানির রীতিও তাই। লাশেট ভুলভাল ব্যালট ভাজ করায় তা আর গোপন থাকেনি। তবে এর জন্য তার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। নির্বাচনি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, তার ভোট বৈধ।
কিন্তু তার এই ভুলের ছবি সামাজিকমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ভুল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনিও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন। লাশেট যেভাবে ভোট দিয়েছেন, তা গোপন ব্যালটে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থারবিরোধী। তাই স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা চাইলে তাকে ভোটদানে বাধা দিতে পারতেন। ডিডব্লিউর ফ্যাক্ট চেকিং টিম ফেডারেল রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি টুইট করে বলেছেন, একজন খুবই পরিচিত রাজনীতিক তার দলের পক্ষে ভোট দেবেন তা প্রত্যাশিত। তাদের সিদ্ধান্ত, এটা ভুলই। লাশেট কোনোভাবে ভোটদাতাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি।
রিটার্নিং অফিসারের ব্যাখ্যা, ভুল করে ব্যালট উলটো দিকে ভাঁজ করা হয়েছিল। তাকে নতুন একটা ব্যালট পেপার দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ব্যালট একবার বাক্সে ফেলে দিলে আর কিছু করার নেই। তার ভোট বৈধ। দুই রাজ্য নির্বাচনেও এসপিডির জয় : সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি রোববার জার্মানির দুটি রাজ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেকলেনবুর্গ ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া ও বার্লিন রাজ্যেও এসপিডি দল সরকার গড়তে চলেছে। এতে সংসদের উচ্চকক্ষে দলের শক্তি অক্ষত রইল। যে দলের নেতৃত্বেই নতুন সরকার গঠন করা হোক না কেন, ক্ষমতার নিরিখে এসপিডি দল সুবিধাজনক অবস্থান নিশ্চিত করেছে। জার্মানির সংসদের উচ্চকক্ষ বুন্ডেসরাট ১৬টি রাজ্যের প্রতিনিধিদের মঞ্চ সব গুরুত্বপূর্ণ আইন সেখানেও অনুমোদন করাতে হয়। ফলে যে দলের হাতে বেশির ভাগ রাজ্যের রাশ রয়েছে, সেই দলের জোর যথেষ্ট বেশি। রোববার উত্তর পশ্চিমের জনবিরল রাজ্য মেকলেনবুর্গ ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া এবং বার্লিনে এসপিডির জয়ের পর বুন্ডেসরাটে এসপিডি দলের ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রইল।