গত ২০ বছরের তুলনায় ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি বিদেশি ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। জার্মানিতে যখন দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিজ দেশে অভিবাসনের জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে ঠিক সেই সময়েই বিপুল সংখ্যাক বিদেশির জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণের খবর পাওয়া গেল।
ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বের ১৭১টি দেশের এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৫ জন বিদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ সালে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিদেশিদের সংখ্যা তার আগের বছরের অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ২৮ ভাগ বেশি।
নাগিরকত্ব পাওয়া বিদেশিদের মধ্য তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন সিরীয়রা। মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশটি থেকে আসা যেসকল ব্যাক্তি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন তাদের গড় বয়স ২৪ দশমিক আট বছর। আর তাদের দুই তৃতীয়াংশ পুরুষ৷ নাগরিকত্ব পাওয়ার আগে তারা গড়ে ছয় দশমিক চার বছর দেশটিতে অবস্থান করেছেন।
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ইউক্রেনীয়রা। রাশিয়ার হামলা শুরুর পর হাজার হাজার ইউক্রেনীয় দেশ ছাড়লে তাদের একটি অংশ জার্মানিতে আশ্রয় নেয়।
২০২২ সালে জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়াদের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাক থেকে আসা অভিবাসীরা। আর চুতর্থ অবস্থানে তুর্কিরা।
ইন্টিগ্রেশন ও মাইগ্রেশন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ইয়ান শ্নাইডার জানান, নাগরিকত্ব পাওয়া সিরীয়দের অর্ধেক ছয় বছরেই জার্মানির নাগরিকত্ব পেয়েছেন। এর কারণ হলো তারা জার্মান সমাজে একীভূত হতে পারার প্রমাণ দেখাতে পেরেছে।
তার মতে, সিরীয়দের জার্মান নাগরিকত্ব চলতি বছর আরও বাড়বে। কারণ ক্ষমতায় থাকা বর্তমান জোট সরকার নাগরিকত্ব আইন সহজ করার কাজ করছে।
বর্তমানে জার্মান নাগরিত্ব পেতে প্রার্থীকে আট বছর ধরে জার্মানিতে অবস্থান করার এবং বি১ লেভের জার্মান ভাষার দক্ষতার প্রমাণ দেখাতে হয়। তাছাড়া, নাগরিকত্বের জন্য একটি বিশেষ লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া চলার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্য থাকা এবং কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকার বিধান রয়েছে।
তবে বর্তমানে দেশটিতে দক্ষ কর্মীর ঘাটতি থাকায় নাগরিত্ব আইন সংশোধনের চেষ্টা করছে ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট। নাগরিকত্ব আইন সহজ করা হলে তা দক্ষ বিদেশি কর্মীরা দেশটিতে অভিবাসী হতে উৎসাহিত করবে এমন ভাবনা সরকারের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসারের প্রস্তাবিত নতুন নাগরিকত্ব আইনে তিনটি বড় পরিবর্তনে কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত নতুন আইনে, আট বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাসের পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে। তাছাড়া সমাজে বিশেষভাবে একীভূত হওয়ার প্রমাণ দেখাতে পারলে তিন বছর বসবাসের পরই আবেদন করার সুযোগ থাকছে।
জার্মানিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের মা অথবা বাবার মধ্যে একজন যদি দেশটিতে পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাস করে থাকেন তাহলে সেই শিশু জার্মানির নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য হবে। এছাড়া ছাড়া, দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার সুবিধাও নতুন আইনে রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।