গত ২৩ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে মধ্যযুগীয় তাণ্ডব সৃষ্টিকারীর হুকুমদাতাদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট। শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যান্য নেতারা।
বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, গত ২৩ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে জামায়াত-শিবির এবং কওমি অঙ্গনের কিছু উগ্রপন্থী তথাকথিত ওলামাদের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন অ লে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানো হয়। এতে থানা, প্রেসক্লাব, ভূমি অফিস, ওস্তাদ আলাউদ্দিনের স্মৃতি ভাঙচুর, রেলস্টেশন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে আগুনসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে নানা উস্কানি দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোতে কখনো উগ্র মতাবলম্বী ছিল না। বর্তমানে হেফাজতে ইসলামের নেতারা জামায়াতে ইসলামীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। গ্রামে গ্রামে হিংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের সরকারি আয়োজন বানচাল করে দেওয়া ছিল এ উগ্রবাদীদের আসল উদ্দেশ্যে। তাদের লক্ষ্য দেশে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অ লে হেফাজতের কর্মসূচি পালনকালে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে মানুষ হত্যার উস্কানিসহ মধ্যযুগীয় তাণ্ডব সৃষ্টিকারীর হুকুমদাতাদের গ্রেফতার, প্রকৃত মাস্টার মাইন্ডদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, একজন বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা, গত বছরব্যাপী ওয়াজের নামে হেলিকপ্টার ব্যবহারকারীদের আয়ের উৎস, তাদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতৎপরতার তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত জনসম্মুখে প্রকৃত কাহিনী প্রকাশ করতে হবে। গুটিকয়েক উগ্রবাদীদের কারণে কওমি মাদ্রাসাগুলোর নিরীহ ছাত্র কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেই দিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা আহমদ শফি হত্যা মামলার তদন্ত দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় যারা অনুপ্রবেশকারীদের ষড়যন্ত্রে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন তাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অগ্নি সংযোগের মামলা ছাড়া সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইসলামী ফাউন্ডেশনের আওতায় চাকরিতে দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া অন্যায় ভাবে কিছু কুচক্রি দৈনিক ভিত্তিতে বেশ কিছু কর্মচারীর বেতন ভাতা বন্ধ রেখে তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও এখনো তাদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়নি এসব কর্মচারীদের দ্রুত বেতন ভাতা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। দেশের সব মসজিদের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে, মসজিদগুলোতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোরআন শিক্ষা ও মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা সিলেবাস, পাঠ্যদান পাঠ্যক্রমকে মূল ধারা বজায় রেখে আরও যুগোপযোগী করার ব্যবস্থা করা। চিহ্নিত উগ্রবাদীদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি লোকজনের দহরম-মহরমের কারণে উগ্রবাদীদের উদ্যত আচরণ অতিরিক্ত ভাবে বাড়ছে এ উগ্রবাদীদের সঙ্গে সম্পর্কিত ২/৪ জন প্রভাবশালী সরকারি ব্যক্তিদের ওপর যথাযথ নজরদারি বাড়াতে হবে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের দাবিগুলো বাস্তবায়নে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও উদ্যতবাদীদের আসল চেহারা জনসম্মুখে ব্যাপক প্রচারের লক্ষ্যে দলের পূর্ব ঘোষিত মহা সমাবেশের পূর্বে দেশব্যাপী ব্যাপক সফর। হেফাজতের তাণ্ডবে হতাহত মাদ্রাসাছাত্র, পথচারী, সাংবাদিক, পুলিশসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার ব্যবস্থা গ্রহণ। আগামী ৫ জুন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের পূর্ব নির্ধারিত ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ। এদিন হবে নীরব বিপ্লবের মাইলফলক। এদিন কওমি অঙ্গনের নিজেদের পূর্বসূরিদের আকিদা ত্যাগকারী মিথ্যাচারী ভণ্ডদের নামের তালিকা প্রকাশসহ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নীল নকশাকারীদের ষড়যন্ত্র, ভ্রষ্টাচারিতার স্বরূপ উদঘাটন করারও ঘোষণা দেন তারা।