জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। এতো দিন আলোচনা চললেও আজ বিকালেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বসবে দল দুটি।
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেই আজ রাতে কিংবা কাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা জানানো হবে। তবে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে অজনপ্রিয় প্রার্থীদের ছাড়ের তালিকায় রাখতে চায় না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
দলীয় সূত্র মতে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আসন সমঝোতা ও নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। বার বার বৈঠক করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি তারা। আজ বিকেল ৪টার দিকে গুলশানের একটি হোটেলে শেষ বারের মতো বসতে যাচ্ছে দল দুটি। সেই বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিকেল ৪টার দিকে আমরা বসতে পারি।
বৈঠকে সমঝোতা চূড়ান্ত হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মানজনকভাবে দুই দলের সম্মতি হবে। যারা নির্বাচিত হওয়ার মতো, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হতে পারবে, ইলেকশনে বিজয়ী হতে পারবে অথবা অতীতে পেরেছে, তাদের কথা মাথায় রেখেই এটা চূড়ান্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, শরিকদের সঙ্গেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে ছাড় হয়নি। ওই অর্থে স্বতন্ত্রের ব্যাপারে তাদের সাথে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করছি সেই জোটটা আমরা মর্যাদার সাথে রক্ষা করতে চাই। কালকে একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে পারব বলে আমরা আশা করছি।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা চললেও দলটির বেশির ভাগ প্রার্থীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোভাব ইতিবাচক নয়। এসব প্রার্থীর বেশিরভাগেরই নির্বাচনী আসনে জনসমর্থন প্রায় শূন্যের কোঠায়, সাংগঠনিক অবস্থাও দুর্বল। এমন প্রার্থী আছেন, যাদের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত কর্মীও নেই। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এই বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
যেসব প্রার্থীর জনসমর্থন একেবারে তলানিতে তাদের বিজয়ী করে আনতে সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
বিগত বৈঠক সূত্র জানায়, আসন সমঝোতা হলেও জাপা প্রার্থীদের স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে হবে— এই অবস্থান এখনও বদলায়নি আওয়ামী লীগ। দলের আলোচকরা জাপা নেতাদের জানিয়েছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া নৌকার প্রার্থীও বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন না।
গত মঙ্গলবারও বৈঠক করছেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ নেতারা। এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন— দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির দুই নেতার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে।
আলোচনার বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে গণতান্ত্রিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির ভূমিকা রয়েছে। সারা দেশে যেভাবে নির্বাচনী উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত কিভাবে রাখা যায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন কিভাবে করা যায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে গতকাল দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে কোনো আসন চাওয়া হয়নি। জাপা জনগণের কাছে আসন চায়।
তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।