নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য করতে উপজেলা নির্বাচনের মতো জাতীয় নির্বাচনও ধাপে ধাপে করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন যদি ধাপে ধাপে আয়োজন করা যায় তাহলে নির্বাচন আরও গ্রহণযোগ্য হবে। এতে নির্বাচনের আয়োজন করতেও সহজ হবে।’
রোববার (২ জুন) আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে টিআইবির সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে সংসদ নির্বাচন পাঁচ দফায় করার পরামর্শ দেয় টিআইবি। তাদের এই পরামর্শের সঙ্গে ইসি একমত জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের আইনে সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা সেটিও স্বীকার করেছি।’
সিইসি বলেন, আমরা টিআইবিকে বলেছি- জাতীয় নির্বাচন ধাপে ধাপে করা যায় কি না, সে ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলতে। কারণ ধাপে ধাপে নির্বাচন আয়োজন করতে পারলে নির্বাচনকে আরও বেশি সুষ্ঠু করা যাবে। কারণ, তখন আরও বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা যাবে। আরও বেশি পোলিং এজেন্ট মোতায়েন করা সম্ভব হবে।
অনেকদিন ধরে উপজেলা নির্বাচন কয়েক দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারও ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন চার দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপেও কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে কয়েক ধাপে জাতীয় নির্বাচন করার পরামর্শ এসেছিল।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈরিতা কমাতে এক টেবিলে বসার প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেন হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এটি করতে হলে সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘টিআইবির সঙ্গে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয়েছে। তারা বলছে নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হয়নি। তবে ফেয়ার হয়েছে। একটা দক্ষতার অভাব রয়েছে। সেটা ওনারা জোর দিয়ে বলেছেন। আমরা তাদের বলেছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ করা। আমরা বলেছি, সমস্যা অনেকটাই রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সমস্যা নিরসন না হলে, নির্বাচন ব্যবস্থাটা আরও স্থিতিশীল হবে না। রাজনৈতিক সমাঝোতা হয়ে গেলে নির্বাচনটা আরও সুন্দর হতে পারে।
সিইসি বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে যদি পদ্ধতিগত উন্নয়ন করা যায় তাহলে ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে। রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে নির্বাচন স্ট্যাবলও হবে না।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা সব অ্যাকশন নেই না। কিছু অ্যাকশন রিটার্নিং কর্মকর্তা নেন৷ হলফনামা বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, সে-ই নির্বাচন কমিশন। শত শত আপিল হয়, এখানে বাতিল হলে কোর্টে যায়, সেখানে ফিরে পায়। আবার আপিলে যায়। সেখানকার সিদ্ধান্তগুলো চ্যালেঞ্জ করি। আমাদের সীমিত সামর্থ্যে আমরা চেষ্টা করি। আমাদের যে অনন্ত সক্ষমতা আছে, সেটা মোটেই না। নির্বাচন কমিশন কখনো একা অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না, যদি না রাষ্ট্র এবং সরকারের পলিটিক্যাল উইল সপক্ষে থাকে। রাষ্ট্রের যদি পলিটিক্যাল উইল সপক্ষে থাকে তাহলে প্রশাসন, পুলিশ, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে বাধ্য।’
সিইসি জানান, ভবিষ্যতে নির্বাচনী আইনের সংস্কার করতে পরামর্শ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে পরবর্তী কমিশনকে পরামর্শও দেওয়া হবে।