রোববার (১ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার ইস্টার্ন জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, এ দেশ কারও একার নয়, সবার। দেশ এখনও পনের বছরের জঞ্জালমুক্ত হয়নি। তাই সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মর্যাদাশীল দেশ গড়ার কাজে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পরনির্ভরশীল নয়, কৃষি ও শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ গড়া প্রয়োজন।
প্রভু নয়, বন্ধু প্রতিবেশি রাষ্ট্র চাই উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, কোনো আগ্রাসী হাত আমরা দেখতে চাই না।
জামায়াত আমির আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের দু’টি দেশপ্রেমিক সংস্থাকে ধংস করে দেয়। প্রথমেই তারা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এরপর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে ও কারাগারে রেখে তিলে তিলে হত্যা করে। কিন্তু তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব এদেশের শান্তিকামী ছাত্র-জনতা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দিয়েছে।
জামায়াত আমির আরও বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে উস্কানি দিচ্ছে। তবে সেই ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেওয়া যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হোক তা ব্যর্থ করতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশ এখনো জঞ্জাল ও স্বৈরাচারমুক্ত হয়নি। তাই জাতীয় প্রয়োজনে জনগণের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, বিগত পনের বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে কারাগার বানিয়েছিল। তাদের মতের ন্যূনতম বাইরে গেলে খুন, গুম করা হতো এবং নির্যাতন ও জেল জুলুম দেওয়া হতো। দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে এদেশের ছাত্র-জনতা ন্যায়বিচারের স্লোগান নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। তাদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়া এখন আমাদের দায়িত্ব। সে লক্ষ্য নিয়েই জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ অঞ্চলের প্রধান দুটি সমস্যা হলো মিল ও বিল। আওয়ামী লীগ আমলে ওই দুটিই ধ্বংস হয়েছে। একদিকে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে, অপরদিকে বিল ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন জলাশয় দখল ও স্লুইচগেট বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে পানিবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের দুর্নীতির কারণে মিলগুলো লোকসানে পরিণত হলেও তার দায়ভার চাপানো হয়েছে শ্রমিকদের ওপর।
ডুমুরিয়া-ফুলতলা সন্ত্রাসকবলিত এলাকা ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাঁচ বছরের জন্য আমাকে এমপি নির্বাচিত করার পর আমি সাধ্যানুযায়ী সন্ত্রাসমুক্ত করেছি। জনগণ আবার দায়িত্ব দিলে আমি প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোর দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করে সমাধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন বলেন, ৫ আগস্টের পট-পরিবর্তনের পর আমিরে জামায়াত দেশবাসীকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে সেই বার্তা নিয়ে দেশবাসীকে মুক্তির পথ দেখাতে হবে। জনগণকে বন্ধু মনে করে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তনে জামায়াতের প্রতিটি জনশক্তিকে ভূমিকা রাখতে হবে। সেবামূলক কাজের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জামায়াত আমির।
মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি শামসুন নাহারের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন- মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নায়েবে আমির অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।