বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শেষ পর্যায়ে রয়েছে গেট নির্মাণের কাজ। প্রস্তুত করা হয়েছে আলোকসজ্জা। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড এলাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বানানো হয়েছে ফেস্টুন-ব্যানার। এখনও কাজ করে যাচ্ছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। কাজ চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণেরও।
সোমবার (১৫ মার্চ) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের ভেতরে বিভিন্ন শৈল্পিকতায় তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। গ্রাউন্ডের ভেতরে বানানো হয়েছে শহীদ মিনার, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা, কুঁড়েঘর, জাতীয় মাছ ইলিশের প্রতিচ্ছবিসহ বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে সব ধরনের দৃষ্টি নান্দনিক উপস্থাপনা।
অনুষ্ঠানমালায় প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিও-ভিজুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। দশ দিনের অনুষ্ঠানমালার থিমগুলো হলো ১৭ মার্চ ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়’, ১৮ মার্চ ‘মহাকালের তর্জনী’, ১৯ মার্চ ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’, ২০ মার্চ ‘তারুণ্যের আলোকশিখা’, ২১ মার্চ ‘ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান’, ২২ মার্চ ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’, ২৩ মার্চ ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’, ২৪ মার্চ ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’, ২৫ মার্চ ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’ এবং ২৬ মার্চ ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’।
১৭ মার্চ ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়’, শিরোনামে বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা সশরীরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থাকবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। থাকবে আলোচনা অনুষ্ঠান, বিভিন্ন বিদেশিদের বিশিষ্টজনদের বক্তব্য (যা ভার্চুয়াল কিংবা সরাসরি অনুষ্ঠিত হবে), সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথমদিনের অনুষ্ঠান দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম পর্বে ১৭ মার্চ বিকাল তিনটায় আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ১০ দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা। থাকবে স্বাগত বক্তব্য, ভিডিওবার্তা, বিশিষ্টজনদের বক্তৃতা, অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশি-বিদেশি বিশিষ্টজনসহ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। ভার্চুয়ালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর। এই দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন ভারতের শিল্পীরা।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড এরই মধ্যে জোরদার করা হয়েছে গোয়েন্দা নিরাপত্তাসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ এই দশ দিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়া অন্যদের আগারগাঁও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড সংযোগ সড়কটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
১৭ মার্চ, ১৯ মার্চ, ২২ মার্চ, ২৪ মার্চ এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হবে এবং রাত ৮টায় শেষ হবে। অন্যান্য দিনের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টা ১৬ মিনিটে শুরু হবে এবং রাত ৮টায় শেষ হবে। প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩০ মিনিটের বিরতি থাকবে।
১০ দিনের অনুষ্ঠানে ৫ দিন পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সশরীরে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন এবং বক্তব্য রাখবেন। এতে পাঁচদিনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থাকবেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ১৭ মার্চ প্রথমদিন ও ২৬ মার্চ শেষদিন উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া ২২ মার্চ যেদিন নেপালের রাষ্ট্রপতি থাকবেন সেদিনও প্যারেড গ্রাউন্ডে সশরীরে উপস্থিত থাকবেন আবদুল হামিদ। বর্তমান করোনাকালীন সময় বিবেচনায় পাঁচশ দেশি-বিদেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে।
এছাড়া বাকি পাঁচদিন রেকর্ডেড প্রোগ্রাম প্রদর্শিত হবে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে। ১০ দিনের অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভি ছাড়াও বিভিন্ন টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির মিডিয়া কনসালটেন্ট আসিফ কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৭ মার্চের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্, ১৯ মার্চ উপস্থিত থাকবেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী, ২৪ মার্চ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন। এই পাঁচদিনের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত আকারে ৫০০ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া এই পাঁচদিনের অনুষ্ঠানসহ অন্য পাঁচদিনের অনুষ্ঠানমালায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ধারণকৃত বক্তব্য প্রদর্শন করা হবে।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড কেন্দ্র করে এরইমধ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নিরাপত্তা বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার গোয়েন্দা বিভাগ এবিএম হাফিজ আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জাতীয় প্যারেড কেন্দ্রিক যে কোনও ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে মোতায়েন রয়েছে পুলিশি নজরদারি। বিদেশি অতিথিদের অনুষ্ঠানে উপস্থিতিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিতির জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাতে নির্বিঘ্নে এই দশদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপিত হয়। এই দশদিন রাজধানীতে কোথাও রাজনৈতিক কোনও কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানান গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এদিকে ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুজিবুর রহমান চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের ১০ দিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড ছাড়াও বিদেশি অতিথিরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এতে করে বিদেশিদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা এরইমধ্যে নিয়েছে ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিদেশি অতিথিরা। তাদের চলাচলের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড কেন্দ্রিক চলাফেরা করতে নগরবাসীকে নিরুৎসাহিত করছে ট্রাফিক বিভাগ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের না হতে বলা হয়েছে।