অবশেষে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের জীবিত অবস্থায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে না পারায় তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চান।
গাজার একটি টানেলে গত শনিবার (৩১ আগস্ট) ছয় জিম্মির মরদেহ পাওয়ার পর ইসরায়েল জুড়ে নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন তরা হয়। খবর বিবিসির।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুদ্ধবিরতি না হলে বাকি জিম্মিদের একই পরিণতি বরণ করতে হবে, তাদেরকেও একইভাবে ‘কফিনে’ ফিরতে হবে পরিবার-পরিজনের কাছে।
জিম্মিদের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল এখন ইসরায়েল। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে স্লোগান দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে বন্ধ হয়ে গেছে দেশটির কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এমন পরিস্থিতিতে জিম্মিদের মৃত্যুর ঠেকানোর ব্যর্থতা স্বীকার করে নিজ জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন নেতানিয়াহু।
জিম্মি সংকটকে ঘিরে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবেও ইসরায়েল সরকারের ওপর ক্রমশ চাপ বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি উল্লেখ করে ইতোমধ্যেই দেশটির কাছে বেশ কিছু অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
অন্যদিকে, হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যথেষ্ট উদ্যোগ নেননি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সর্বশেষ গাজা থেকে যে ছয় জিম্মির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন মার্কিন নাগরিকও রয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে ইসরায়েলের হাজার হাজার মানুষ
গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য বেশ আগে থেকেই নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এ লক্ষ্যে সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল সফরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরও গাজায় যুদ্ধ থামায়নি ইসরায়েল।
গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের আড়াইশোর বেশি নাগরিককে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামাস।
ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না করলে অন্য জিম্মিরাও ‘কফিনে করে’ ফিরবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষর না করে শক্তি খাটিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে নেতানিয়াহুর চাপ দেওয়ার পরিণতি হলো, জিম্মিরা কফিনে করে পরিবারের কাছে ফিরবেন।
শনিবার ছয় জিম্মির মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সেটি এখন দেশটির অন্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
পতাকা হাতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন। জিম্মি ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাদের স্বজনদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরিভিত্তিতে হামাসের সঙ্গে আলোচনা এবং চুক্তি করা দরকার।
কিন্তু নেতানিয়াহুর সরকার সেটি না করায় জিম্মিদের এখন অকারণে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে জিম্মি ব্যক্তিদের পরিবারগুলো বলেছে, নানা অজুহাতে হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে বিলম্ব করার কারণেই নতুন করে আরও ছয় জিম্মির মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারগুলোর দাবি, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সদিচ্ছা দেখালে তাদের স্বজনরা এখনো বেঁচে থাকতেন।
মূলত সে কারণেই রাজধানী তেলআবিবের রাস্তায় নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে জিম্মিদের মুক্তির জন্য অবিলম্বে হামাসের সঙ্গে চুক্তির দাবি জানাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
তবে হামাসের শর্ত মেনে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে নারাজ দেশটির প্রধানমন্ত্রী মি. নেতানিয়াহু।
উল্লেখ্য যে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করে জিম্মি ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে নিতে ফিলাডেলফি সীমান্ত থেকে ইসরাইলি সেনাদের সরিয়ে নিওয়ার শর্ত দিয়েছে হামাস।
মিশর সীমান্ত ঘেঁষা ‘ফিলাডেলফি করিডোর’ একটি বাফার জোন বা নিরাপদ অঞ্চল, যা প্রায় একশো মিটার প্রশস্ত।
সৈন্য অপসারণ করলে হামাস আবারও গুরুত্বপূর্ণ এই সীমান্ত ব্যবহার করে অস্ত্র আমদানি শুরু করতে পারে, এমন আশঙ্কা জানিয়ে হামাসের শর্ত মানতে রাজি হচ্ছেনা নেতানিয়াহু প্রশাসন।
এদিকে, জিম্মিদের মুক্তির দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করছে ইসরায়েলের ট্রেড ইউনিয়ন ‘হিস্ট্রাড্রট’। সোমবার ওই ধর্মঘটের ডাক দেন তারা।
আবার, তেলআবিবে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়ছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের অনেকেই শারীরিক নির্যাতন ও আটকের শিকার হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
যদিও দেশটির পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তারা বাধ্য হয়েছেন।
হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যথেষ্ট উদ্যোগ নেননি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
জিম্মি মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন তিনি।
অভিযান শুরুর পর গত নভেম্বরে বন্দি বিনিময়ের শর্তে গাজায় সাতদিনের একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল।
সেসময় সময় শতাধিক জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। একইভাবে, ইসরায়েলও তাদের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের কয়েকজনকে মুক্তি দেয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্যমতে, গাজায় হামাসের কাছে এখনও অন্তত ৯৭ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন। এছাড়া জিম্মি অবস্থায় মারা গেছেন কমপক্ষে ৩৩ জন। এদিকে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ভূমি দখলের ঘটনা গত কয়েক মাসে অনেক বেড়েছে।