রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। ব্যারিকেডগুলোর সামনে দাঁড়াচ্ছেন ৪-৫ জন করে পুলিশ সদস্য। একজন গাড়ি থামাচ্ছেন, বাকিরা ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করছেন। কারণ যৌক্তিক হলে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর অতি জরুরি না হলে গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
এটি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেওয়া কঠোর বিধিনিষেধের (১৪ তেকে ২১ এপ্রিল) প্রথমদিন বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকালের চিত্র। তবে, একই সঙ্গে সরকারে জারি করা আগের বিধিনিষেধের সময় সড়কে যে পরিমাণ যানবাহন বা মানুষ দেখা গিয়েছিল, আজ সেই ছাপ নেই বললেই চলে।
সরেজমিন পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বংশালের নর্থ-সাউথ রোড মোড় এবং বংশাল চৌরাস্তায় দুটি পুলিশি ব্যারিকেড রয়েছে। এই এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ। সড়কে যান চলাচল এবং সাধারণ মানুষের সংখ্যাও কম। তবে অল্প সংখ্যক মানুষ মাইক্রোবাস, রিকশা এবং মোটরসাইকেলে চলাচল করছে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বংশালে পুলিশ সদস্যরা ‘ঢাকা ওয়াসা’ স্টিকার লাগানো একটি মোটরসাইকেল থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মোটরসাইকেল আরোহী জরুরি প্রয়োজনে তার বোনের বাসা বাবুবাজার থেকে উত্তরখান যাওয়ার কথা পুলিশকে জানান। তবে তার যাওয়ার ‘কারণ’ পুলিশের জরুরি মনে না হওয়ায় তাকে উল্টোপথে ফেরত পাঠানো হয়।
সড়কে দায়িত্বে থাকা যাত্রাবাড়ী থানার সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) সাত্তার বলেন, সবাইকে থামিয়ে প্রথমেই আমরা তাদের কাছে মুভমেন্ট পাস দেখতে চাচ্ছি। অল্প সংখ্যক লোক পাস দেখাতে পারছেন। অনেকে আবার পুলিশকে ‘কিসের পাস’, ‘কোথায় দেয় এই পাস’ ইত্যাদি প্রশ্ন করছেন। এছাড়াও কেউ কেউ পুলিশকে পাস দেখালেও পাসে উল্লেখিত কারণ আর তাদের মুখে বলা কারণের সঙ্গে কোনো মিল নেই।
তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির বাড়ি দনিয়া। তার মুভমেন্ট পাসে প্রয়োজনের জায়গায় ‘মুদি পণ্য কেনাকাটা’ উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি ঢাকা মেডিকেলে রোগী দেখতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এমন ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠাচ্ছি। তবে পুলিশ যথেষ্ট নমনীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে বলেও জানালেন তিনি।
ফটো সাংবাদিক সুমন শেখ সকাল থেকে রাজধানীর খিলগাঁও, মানিকনগর, টিটিপাড়া এলাকায় ঘুরেছেন। এসব এলাকার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেয়। প্রতিটি পয়েন্টে ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে দুইজন লাঠি হাতে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দিচ্ছে। চেক পোস্টগুলোতে বেশিরভাগ মাইক্রোবাস ও পণ্য সরবরাহকারী ট্রাক দেখা যায়। মাইক্রোবাসগুলো ‘জরুরি সেবা’ বা প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ছিল। পুলিশ সেগুলো থামিয়ে চালকের সঙ্গে চলাচলের কারণ জানতে চাইছে। রিকশায় চলাচল করা প্রত্যেককেই আইডি কার্ড ঝুলিয়ে আসতে দেখা গেছে। সংকটের কারণে অনেক রিকশায় কাছাকাছি গন্তব্যের দুইজন একসঙ্গে উঠেছে। অপরিচিত হওয়ায় তাদের নামিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।
সরকারি বিধিনিষেধ মানার বিষয়ে বুধবার (১৪ এপ্রিল) পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার যে সব নির্দেশনা দিয়েছে তার আলোকেই পুলিশ কাজ করছে। এছাড়াও করোনাকালে দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের একটি সুলিখিত ও আন্তর্জাতিক মানের এসওপি (স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিওর) রয়েছে। সেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্য ও তা পালনের উপায়। সেই এসওপি অনুসরণ করে সরকারি নির্দেশনার আলোকে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।
এর আগে ৫ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল। পরে তা আরও দুইদিন বাড়ানো হয়েছিল। তা অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়। তবে এ দফায় আজ থেকে জারি করা বিধিনিষেধে ‘অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকার এবং টিকা কার্ড নিয়ে টিকার জন্য যাওয়া) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে কাউকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেন। যাদের একান্তই প্রয়োজন তাদের ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বের হতে বলেছেন।