ভোজ্যতেল ও চিনিসহ কয়েকটি পণ্যের বাজার বড়জোর চার পাঁচটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেছেন, ‘তারা যাতে অন্যায্যভাবে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সরকারের নজরদারি রয়েছে। যেসব কোম্পানি অতি মুনাফার জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করছে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তাদের তালিকা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে।’
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিএফডিসিতে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ’ বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, পণ্য মজুতসহ অন্যায়ভাবে দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতিযোগিতা কমিশনে ৫৩টি মামলা চলমান রয়েছে। রোজার আগে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার পেছনে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব কারণ দেখিয়েছে, তার সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এ এইচ এম সফিুকজ্জামান বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, ফিড, বাচ্চা ও ওষুধের দাম বেড়েছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার জন্য আমরা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করেছি। কমিটি সেগুলো যাচাই-বাছাই করছে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও এ বিষয়ে কাজ করছেন।
ভোক্তার ডিজি বলেন, রমজানের আগের ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনকারী চারটি বড় প্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিদপ্তরের অফিসে এসে ঘোষণা দিয়ে এক দিনে ৮০ টাকা দাম কমিয়ে দিয়েছে। এরপর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও কমে গেল। ১৯৫ টাকা ঘোষণা দিয়ে তারা ১৫৩ টাকা করে প্রতিকেজি মুরগি বিক্রি করেছে। এটা ছোট খামারিদের ধ্বংস করার জন্য করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি।
ভোক্তার অধিকারের জন্য ভোক্তাকেই আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভোক্তারা যদি সচেতন না হয়, নিজের অধিকারের কথা নিজে প্রতিষ্ঠা না করে, তাহলে শুধু ভোক্তা অধিদপ্তর দিয়ে এটি কখনোই সম্ভব নয়। আমরা শুধু প্রতীকী অভিযান করে মানুষের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরছি।
গরুর মাংসের দাম নিয়ে ভোক্তার ডিজি বলেন, দেশে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা হলেও ভারত, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩শ টাকা কম দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য ভোক্তাদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণও দায়ী। আমাদের বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। কিন্তু ভোক্তাকে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াও পরিবহণ ভাড়া ও রাস্তায় পদে পদে চাঁদাবাজিও দায়ী। এসবের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ অপর্যাপ্ত।’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সাধারণ ভোক্তাদেরও দায়ী করে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এবার রমজানের প্রথম দিন দুপুরে ৪০ টাকার বেগুন ১০০ টাকা হয়ে গেল। কারণ, ভোক্তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। রমজানে দাম বেড়ে যাবে, এ ভয়ে ভোক্তারা এক কেজির জায়গায় পাঁচ কেজি বেগুন কিনেছে। এ জায়গায় আমাদের সচেতন হতে হবে। নাহলে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ কখনোই সম্ভব নয়। প্রতিটি পণ্যের চাহিদা আছে। সেই চাহিদা যদি হঠাৎ করে কয়েকগুণ বেড়ে যায়, তাহলে তো অসাধু ব্যবসায়ী-সিন্ডিকেট সুবিধা নেবে। ভোক্তা অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং করে এসব সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সুপারিশ করতে পারে শুধু। কারণ, আমাদের আইনে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।
ভোক্তার ডিজি বলেন, আমরা ধান, চাল, সবজি, মাছ, মাংসের মতো অনেক পণ্য উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় আরও অনেক পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। এর ফলে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিত দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোতেও এ মন্দা চলছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিই দ্রব্যমূল্য বাড়ার প্রধান কারণ’ বিষয়ক এ ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে স্টেট ইউনিভার্সিটি ও বিরোধী দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।