রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই তাকে তল্লাশিও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, আশপাশের এলাকায় মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন ওৎ পেতে থাকতে পারে, তাই তারা সতর্কতা অবলম্বনের জন্য তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে লাঠি সোঁটা নিয়ে কোটা বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন। দুপুর আড়াইটায় গায়েবানা জানাজা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের ভিক্টোরিয়া পার্ক, সদরঘাট, জবির প্রধান ফটকে তল্লাশি বসান শিক্ষার্থীরা।
সদরঘাটমুখী সব যানবাহনকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তারা। শিক্ষার্থী ব্যতীত বহিরাগত কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় বিশ্রামরত সকলকে জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে, এবং শিক্ষার্থীরা তাদের সরিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে জাতীয় কবি নজরুল কলেজের সামনে মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে ধাওয়া দিয়েছেন জবি শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ছাত্রলীগ সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন গতকাল মঙ্গলবার বেশ সহিংস রূপ নেয়। এদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ৬ জন মারা যান। আহত হন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
এ অবস্থায় মঙ্গলবারই সারা দেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাস ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। হলগুলোর ভেতরে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকেই আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলন এখনো চলছে। আজ বুধবারও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ ৬ জেলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।