‘করোনা প্রতিরোধে অবিলম্বে জনগণের সকল অংশকে আগামী তিন মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন দিতে হবে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অন্য অনুষঙ্গগুলো প্রতিপালন জরুরি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রথমেই ভ্যাকসিন এনে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারলেও এখন ভ্যাকসিন আনা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। শুক্রবার (১১ জুন) দিনব্যাপী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভার্চুয়াল সভায় কমরেড রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে এসব কথা বলা হয়। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক করোনা অতিমারি মোকাবিলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষায় জনগণের পাশে দাঁড়াতে ১৮ দফা নির্দেশনা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়, ভ্যাকসিন সংগ্রহে মাত্র একটি উৎসে নির্ভরতা, একক ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষায় অন্য উৎস থেকে ভ্যাকসিন আনায় বাধা এবং ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি ও সরকারের প্রাথমিক সাফল্যকে ম্লান করে দেয়নি কেবল, জনগণের জীবন ও জীবিকাকেও ঝুঁকিতে ফেলেছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, মানুষের জীবনই প্রধান বিষয়; সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি, ব্যর্থতা ও অদক্ষতা আরেকবার প্রকট হয়ে প্রকাশ পেয়েছে। সীমান্ত জেলাগুলোতে যেখানে বহু আগেই লকডাউন প্রয়োজন ছিল, সেখানে তা না করায় এখন সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রস্তাবে, করোনা সংক্রমণে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উদ্ধার পেতে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
অতিমারির প্রভাবে বিধ্বস্ত দরিদ্র ও শ্রমজীবীদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান, ভ্যাকসিন প্রাপ্তি সহজীকরণ, আগামী ছয়মাস পাঁচ হাজার টাকা নগদ সহায়তা প্রদান ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সর্বজনীন পেনশন চালুর দাবি জানানো হয়।
সভার শুরুতে কেন্দ্রীয় কমিটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে। শোক প্রস্তাবে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির প্রবীণ নেতা, সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গাজীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মীর দেলোয়ার হোসেন, বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য কমরেড গোলাম রাব্বানী মুকুল, রংপুর জেলার পার্টি সভ্য কমরেড মকবুল হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহর কমিটির সদস্য কমরেড পরিতোষ ঘোষ, পাবনা জেলার বেড়া থানার পার্টি সদস্য কমরেড আব্দুল বাতের মৃত্যুতে শোক জানানো হয়।
এছাড়া শোক প্রকাশ করা হয়- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র প্রেসিডিয়ামের সাবেক সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মোর্শেদ আলী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, কলামিস্ট, গবেষক, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মিতা হক, সাংবাদিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালিদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলা একাডেমির সভাপতি, সাবেক মহাপরিচালক, লেখক, গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, কিংবদন্তী অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী সরওয়ার, একুশে পদক প্রাপ্ত দেশবরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও খুলনা জেলার পার্টি সভ্য বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক, সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির পুত্র সাংবাদিক আশিস ইয়েচুরি ও বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও শক্তিমান সাহিত্যিক কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নেন- কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড সুশান্ত দাস, কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক, কমরেড নুর আহমেদ বকুল, কমরেড কামরূল আহসান, কমরেড ইব্রাহিম খলিল, কমরেড দিপঙ্কর সাহা দিপু, কমরেড এড, নজরুল ইসলাম, কমরেড নজরুল ইসলাম কমরেড অ্যাডভোকেট লোকমান হোসেন, কমরেড জাকির হোসেন রাজু, কমরেড আব্দুল মজিদ, কমরেড সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, কমরেড মুহিবুল্লাহ, কমরেড অ্যাডভোকেট এন্তাজ বাবু, কমরেড দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু, কমরেড অ্যাডভোকেট ফিরোজ আলম, কমরেড এড, কাজি মাসুদ, কমরেড কিশোর রায়, কমরেড গোলাম নজব চৌধুরী পাওয়ার, কমরেড তপন রায়, কমরেড রুহুল আলম মাস্টার, কমরেড বেনজীর আহমেদ, কমরেড মুর্শিদা আক্তার নাহার প্রমুখ।
সভায় করোনা মোকাবিলায় এবং জনগণের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় তাদের পাশে দাঁড়াতে ১৮ দফা যে নির্দেশনা কর্মসূচি দেয়া হয়েছে তা প্রতিপালনে পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় ‘ভলেন্টিয়ার বাহিনী’ গঠন করে পার্টি স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রমে নেমে পড়েছে তা অনুসরণ করে অন্যান্য জেলাতেও এই কর্মসূচি গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি সকল জেলা কমিটিকে আহ্বান জানানো হয়।