সারাদেশের ৬ জেলায় বজ্রপাতে শিশুসহ অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার (৪ জুন) রাত পর্যন্ত জামালপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বাগেরহাট, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ ও দিনাজপুরে এ ঘটনা ঘটে।
জামালপুর: নিহত ৬
জামালপুরে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে ছয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বকশীগঞ্জ উপজেলায় একজন নারীসহ তিনজন ও দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় মারা গেছেন একজন করে। শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সময় এসব স্থানে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের পূর্বকলকিহারা গ্রামের মহিজল হকের ছেলে হরবাদশা (৪৫), একই গ্রামের আব্দুল খালেকের স্ত্রী আকিজা বেগম (৩৫) ও উত্তর মাইছানিরচর গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে খলিলুর রহমান (৫৫) বজ্রপাতে মারা যান। তাদের মধ্যে হরবাদশা ক্ষেত থেকে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে, আকিজা বেগম বাড়ির পাশে ধান শোকানোর সময় এবং খলিলুর রহমান স্থানীয় ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করার সময় বজ্রপাতে মারা যান।
অপরদিকে একই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানি ইউনিয়নে রানা মিয়া (১৮) নামের এক নির্মাণ শ্রমিক বজ্রপাতে মারা গেছেন। রানা মিয়া স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণ কাজ শেষে বাড়িতে ফেরার পথে দিঘিরপাড় এলাকায় বজ্রপাতের শিকার হন। তিনি দেওয়ানগঞ্জের গামারিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
এ ছাড়া বিকেল ৫টার দিকে জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের বাড়ই পটল গ্রামে বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে আঙ্গুরী বেগম (৪৫) নামে একজন গৃহবধূ মারা গেছেন। তিনি স্থানীয় মোজাম্মেল হকের স্ত্রী। সন্ধ্যায় বৃষ্টির সময় মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের বীর ঘোষেরপাড়া গ্রামের কৃষক তাজেল মণ্ডল (৪০) বাড়ির কাছে মাঠে খড় গোছানোর কাজ করছিলেন। এ সময় আকস্মিক বজ্রপাতে তিনি মারা যান। তিনি স্থানীয় কাজিম উদ্দিনের ছেলে।
দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ও থানা সূত্র বজ্রপাতে ছয় ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: নিহত ৩
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে মা-ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। বিকেলে সদর উপজেলার সুন্দরপুর ও চরবাগডাঙা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের পাঁচরশিয়া গ্রামের রানা আলীর স্ত্রী এ্যানি বেগম (২৬) ও তার ছেলে নূর মোহাম্মদ (৬)। অপরজন একই উপজেলার চরবাগডাঙা ইউনিয়নের বাখর আলী গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে ইয়ামিন আরাফাত (১০)।
সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, বিকেলে ঝড়ের মধ্যে বাড়ির পাশে আম কুড়াতে যান মা-ছেলে। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলে তারা মারা যান। অপরদিকে চরবাগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হোসেন আলী ঝাটু বলেন, বৃষ্টির সময় বাগানে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ইয়ামিন আরাফাত মারা যান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মৌদুদ আলম খাঁ বলেন, জনপ্রতিনিধিরা তিনজন নিহতের বিষয়টি জানিয়েছেন। সরকারিভাবে তাদের অনুদান দেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ: নিহত ২
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে ২ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার বাঙ্গালা ইউনিয়ন ও বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, উপজেলার বাঙ্গালা ইউনিয়নের পাড়মোড়দহ গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে সেলিম রেজা (৩০) ও বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের হাওড়া গ্রামের লালচান মিয়ার ছেলে আবদুল আলিম (৩৭)।
নেত্রকোনা: নিহত ১
নেত্রকোনার পূর্বধলায় বজ্রপাতে আশা মনি (৭) নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আশা একই গ্রামের আব্দুল আলীর মেয়ে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টায় বৃষ্টিপাত শুরু হলে আশা মনি বাড়ির পাশের পুকুর পাড় থেকে গরু আনতে যায়। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।
এদিকে সেলিনা বাড়ির পাশের একটি পুকুরে গোসল করছিলেন। এসময় বজ্রপাতে তিনি আহত হন। স্থানীয়রা তাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বজ্রপাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মাদ শিবিরুল ইসলাম।
বাগেরহাট: নিহত ১
বাগেরহাটের শরণখোলায় মাঠে গরু আনতে গিয়ে মো. আবুবক্কর খান (২৮) নামের এক কৃষক বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বিকালে উপজেলার ৩নং-রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর গ্রামের বুড়ির মাঠ এলাকায়।
দিনাজপুর: নিহত ১
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ক্ষেতে মরিচ তোলার সময় বজ্রপাতে বাধন রায় (১৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের চকদুর্গা রামসাপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বাধন রায় ওই এলাকার নারায়ণ চন্দ্র রায়ের ছেলে।