জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনের উপ-নির্বাচনে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্য নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করার মনোভাবে কাজ করলেও এবার চিত্রটা ভিন্ন। কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে সফর করে নেতাদের এক করেছেন। কিন্তু ভোট নিয়ে হাঁকডাক কম। জয়-পরাজয় নিয়ে বেশি মাথাব্যথা নেই।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, কেন্দ্র থেকে প্রতিনিধি গিয়ে স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে এসেছেন। ঐক্যবদ্ধ করেছেন তাদের। এতে মূল কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। এবার জয়-পরাজয় তৃণমূলের বিষয়। তারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে জয়ী হবে। বিভাজন হলে নিজেদের কপাল পুড়বে।
২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগের গণসমাবেশে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরদিন তারা সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমাও দেন। পরে ছয়জনের আসন শূন্য ঘোষণা করে ১১ ডিসেম্বর রাতেই গেজেট প্রকাশ করে সংসদ সচিবালয়।
ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলবে।
ছয় আসনের তিন আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এগুলো হলো বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন। এর বাইরে দুটি আসনে জোটের শরিক জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিকে একটি করে আসন ছাড় দিয়েছে। একটিতে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাকেই বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এটিকে ট্রাম্পকার্ড বলছে দলটি।
বগুড়া-৪ আসনের ১৪ দলীয় মনোনীত প্রার্থী বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি একেএম রেজাউল করিম তানসেন এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী। এই দুই আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহায়তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দলগুলো কাজ করছে। এর বাইরে বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন নিয়ে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ।
বগুড়া-৬ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আওয়ামী লীগের প্রার্থী মু. জিয়াউর রহমান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) মো. আব্দুল ওদুদ। প্রার্থীদের জেতাতে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ মাঠে নেমেছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সফরের পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও তাদের দলবল নিয়ে ঘুরে এসেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে জেতাতে চায় আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন মিলনায়তনে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া সমর্থকগোষ্ঠীর ব্যানারে এক কর্মিসভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ওই সময় আব্দুস সাত্তারের কলার ছড়া প্রতীকের অপর নাম ‘নৌকা’ বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবো। ১ তারিখ (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর খবর হবে কলার ছড়া জিতেছে, নৌকা জিতেছে। কলার ছড়ার অপর নাম নৌকা। বেনামে দিলাম আরকি। এটা মনে করেই চলবেন। দেখলেন না, লোকজন সব আওয়ামী লীগের, নাম দিলাম সমর্থকগোষ্ঠী। আসলে ভাসুরের নাম বলা যায় না, এখানে সবই আমরা।’
আহমদ হোসেন বলেন, ‘এই নির্বাচনে জয়লাভ করা প্রয়োজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী করার জন্য। তিনি (আব্দুস সাত্তার) আমাদের ট্রাম্পকার্ড। আগামী দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এটা সেমিফাইনাল, এই সেমিফাইনালে জিততে হবে।’
ছয় আসনের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপ-নির্বাচনে প্রার্থী এবং মাঠের নেতাকর্মীরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি ও মিডিয়া ফোকাস তুলনামূলকভাবে কম। উপ-নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক হবে।’
দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী জাগো নিউজকে বলেন, বগুড়া-৬ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহট) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওদুদ নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আমি আসনগুলো সফর করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দিয়ে আসছি। দেখেছি, জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে নৌকার বিজয় হবে।