কুমুদিনী হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগে এক প্রসূতির নবজাতক পরিবর্তনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহবধূ ও তার স্বামীর অভিযোগ, তার ছেলেসন্তান জন্ম হলেও দেওয়া হয়েছে মেয়ে সন্তান। গৃহবধূর পরিবার ছেলে সন্তানের দাবি জানিয়ে মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গৃহবধূর বড় বোন শারমিন আক্তার বোনের ছেলেসন্তান ফিরে পেতে বৃহস্পতিবার রাতে মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
গৃহবধূর পরিবার, লিখিত অভিযোগ ও পুলিশ সূত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের ঘাগরাই কুড়াতলি গ্রামের আরশাদুল ইসলামের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারকে (১৯) প্রসবজনিত কারণে গত ২৬ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে কুমুদিনী হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
কুমুদিনী হাপাতালসহ আরো দুটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সুমাইয়ার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। কুমুদিনী হাসপাতালের চিকিৎসক পবন কুমারসহ ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করে সুমাইয়ার ছেলেসন্তান হওয়ার বিষয়টি জানান।
২৭ অক্টোবর বিকেল পৌনে চারটার দিকে সুমাইয়ার বাচ্চা প্রসবের জন্য ওটিতে নেওয়া হয়। ৪টা ২৫ মিনিটে কুমুদিনী হাসপাতালের চিকিৎসক তরুণ ও সিনিয়র নার্স তৃপ্তি হালদারের সহযোগিতায় চিকিৎসক তমা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করান। পাঁচটার দিকে কর্তব্যরত নার্স হাসপাতালে অপেক্ষমাণ সুমাইয়ার স্বজনদের ছেলেসন্তান হয়েছে বলে দেখান এবং বাচ্চার অবস্থা ভালো নয় বলে রিকভারি ওয়ার্ডে রাখার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান।
খুশির খবরে সুমাইয়ার স্বজনরা হাসপাতালে মিষ্টিও বিতরণ করেন। রাতে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য বাচ্চাটিকে সুমাইয়ার কাছে নেওয়া হয়। সুমাইয়া মেয়ে সন্তান দেখতে পেয়ে নার্সদের বলেন, আমার ছেলে সন্তান হয়েছে, আমাকে মেয়ে দিলেন কেন? তখন নার্স তাকে জানান তার মেয়ে সন্তান হয়েছে। বাচ্চার কান্না থামানোর জন্য ওই নবজাতক মেয়ে শিশুকে সে তার বুকের দুধও পান করান।
সুমাইয়ার পরিবার হাসপাতালে এসে নার্স ও কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। সংবাদটি হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। তবে হাসপাতালের সব কাগজপত্রে সুমাইয়ার কন্যাসন্তান হওয়ার বিষয়টি লিপিবদ্ধ রয়েছে।
খালা হালিমা বেগম জানান, হাসপাতালের নার্স সুমাইয়ার ছেলেসন্তান ওটির বাইরে এনে আমাদের দেখিয়েছেন। এখন বলছেন মেয়েসন্তান হয়েছে। এ ছাড়া আমরা বাড়ি থেকে বাচ্চার জন্য যে কাঁথা দিয়েছি তা ওই কন্যাসন্তানের পরনে নেই। আমরা আমাদের নাতি ভাইকে ফেরত চাই।
মামা আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের রোগীর অবস্থা ভালো না। এ ছাড়া সুমাইয়া দরিদ্র পরিবারের সদস্য হওয়ায় হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাদের বাচ্চা পরিবর্তন করেছেন।
সুমাইয়ার ছেলেসন্তান ফিরে পেতে বড় বোন শারমিন আক্তার মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে আমাদের ছেলেসন্তানের খবর জানানো হয়েছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়ে সন্তান বুঝে নিতে চান তারা।
কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার প্রদীপ কুমার রায় বলেন, প্রত্যেক প্রসূতি মাকে বাচ্চা প্রসবের আগে একাধিক আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। রিপোর্টে যদি চিকিৎসকরা ছেলেসন্তানের কথা বলে থাকেন এবং অস্ত্রোপচারের পর নার্সরা ছেলেসন্তান সুমাইয়ার স্বজনদের দেখিয়ে থাকেন, তাহলে কোনো এক জায়গায় ভুল হয়েছে। হাসপাতালে অনেক শিশুর জন্ম হয়েছে। এত শিশুর মধ্যে বাচ্চা চিহ্নিত করা সহজ কাজ নয়। তবে সুমাইয়ার পরিবার চাইলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করানো যেতে পারে বলে তিনি জানান।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শক তদন্তের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুবেল হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কুমুদিনী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।