জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি না করায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে ওই শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
জানা যায়, রোববার রাতে সদ্য চালু হওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ২০১৯-২০ লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে ছাত্রলীগ না করায় মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে নিহাদের সহপাঠীরা জানান, নিহাদকে রাত দেড়টার পর ধরে নিয়ে গিয়ে পিঠে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। অত্যাচারের শিকার হয়ে সে কয়েকবার বমি করেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নিহাদ বলেন, আমি কেন ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি করি না এ অভিযোগেই মূলত আমাকে ডাকা হয়। আমাকে নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে আমার বুকে রামদা ধরা হয়। খালেদা জিয়ার ছবি আমার ফেসবুকে আপলোড দেওয়া হয়। আমার একটা ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক বলানো হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের নেতাকর্মী থাকবে না।
ওয়ালিদ নিহাদ রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগে লিখেছেন- ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাকে হলে ডেকে নিয়ে যায়। হলে গেলে আমাকে থাপ্পড় মারে। আরও কয়েকজন টানা লাথি-ঘুসি মারতে থাকে। আমি কেন রাকিব ভাইয়ের রাজনীতি করি না। আমি নাকি অন্যদেরও রাজনীতি করতে বাধা দিয়েছি, যা ভিত্তিহীন।
লিখিত অভিযোগে তিনি আরও বলেন, পারিবারিক সমস্যার কারণেই আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই; কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে নাকি রাজনীতি না করে উপায় নাই। একপর্যায়ে আমার হাতে রামদা দিয়ে আমাকে রাজনীতি করব বলে পা ধরে মাফ চাইতে বলে। তারা আরও বলেন- কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার নিয়ে যাবি না। রাকিব ভাই চাইলে ভিসি পরিবর্তন হয়। বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবি না, বুয়েটের আবরারের মতো মরবি।
এদিকে ওয়ালিদ নিহাদকে নির্যাতনের ঘটনায় সোমবার সকালে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক আটকে আন্দোলন করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সঠিক বিচারের দাবিতে আলটিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা। পরে নিহাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আবারো দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তারা তাদের অভিযোগ ও দাবিগুলো তুলে ধরেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, এ ঘটনাটি আমি সকালে জানতে পেরেছি। আমরা বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার বলেন, নিহাদ এখন ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ঘটনাটি শোনার পর আহত শিক্ষার্থীকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। আমি তার পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।
তিনি বলেন, আমি এমন দুঃখজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-কানুন ও বিধি সব কিছুই কাজ করবে এ বিষয় নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান জানান, এ ঘটনার সত্যতা এখনো আমি পাইনি। যদি কোনো ছাত্রলীগ কর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে মাসুম হাওলাদারকে প্রধান করে প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান ও ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা তপন কুমার সরকারকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।