যুবলীগের শান্তি সমাবেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) গামছা পরিয়ে বিদায় করার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন। হুমকি দেয়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বিব্রত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানান ইউএনও উম্মে তাবাসসুম।
এদিকে ইউএনওর অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে দাবি উপজেলা চেয়ারম্যানের। এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেনকে সাত দিনের মধ্যে এই বক্তব্য প্রদানের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
গত সোমবার (১৯ জুন) বিকেল ৫টার দিকে ভোলাহাট উপজেলার মেডিকেল মোড়ে উপজেলা যুবলীগের ডাকে শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন। এসময় তিনি বলেন, সবাই প্রস্তুত থাকো, যে নকশা চলছে আগামী ঈদের পরে ভোলাহাট ইউএনও উম্মে তাবাসসুমকে গামছা পরিয়ে এই উপজেলা থেকে বিদায় করা হবে। এখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ লড়াই করে টিকে আছে। তাই এখানে ভয় দেখানোর কিছু নেই। কিভাবে তুমি আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানকে সরিয়ে জামায়াত-বিএনপির লোককে বসানোর চেষ্টা করছো, এটা তোমাকে ঈদের পরে ঠিক দেখানো হবে। তোমার ১৪ গুষ্টির নাম ভুলিয়ে দেওয়া হবে।
দুই মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের প্রকাশিত ভিডিওটিতে পুরো সময় জুড়ে ইউএনওকে নিয়ে বিষোদগার করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমাকে বরখাস্ত করার জন্য উৎপাত চলছে। আমার কর্মচারী চালকের ওভারটাইম বেতন দেওয়া হচ্ছে না। শুধু জামায়াত-বিএনপি নয় প্রশাসনে বসেও শেখ হাসিনার নামে যারা চলছে, বর্তমান ইউএনও সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। এখানে দাঁত ভাঙা জবাব কেউ দেখেনি, সবাই চুপচাপ আছে ইনশাআল্লাহ ঈদের পরে সেই রুপ দেখতে পাবে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানকে সরানোর পাঁয়তারা করছে। ঈদের পরে তোমার চৌদ্দ গুষ্টির দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে ইউএনও উম্মে তাবাসসুম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্যটি ভাইরাল হওয়ার পর একজন নারী সহকর্মী হিসেবে যতোটা শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতায় থাকার কথা আমি তাতেই রয়েছি। তবে কেন তিনি এসব কথা বলেছেন, এটা তার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। তার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করছেন, সেসব বেশিরভাগ প্রকল্পেরই তিনি সভাপতি। তার স্বাক্ষর ছাড়া কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না। এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তা মিথ্যা ও বানোয়াট বলে জানান ইউএনও উম্মে তাবাসসুম৷
এদিকে ইউএনওর অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাতেই এমন বক্তব্য রেখেছেন বলে দাবি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেনের। তিনি বলেন, ইউএনও আমাকে উপজেলা পরিষদ থেকে সরাতে চায়। আমাকে সরিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোক এনে বসাতে চায়। ইউএনও আসার পর সব নিয়ম অমান্য করে ভিজিডির তালিকা করতে দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তাদেরকে দিয়ে। সেখানে সামর্থ্যবানদের নাম দেওয়া হয়েছে। এডিপির প্রকল্পে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে প্রত্যাখান করেছেন, এমনকি তার কাছে উল্টো উৎকোচ দাবি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ইউএনও উম্মে তাবাসসুম রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে আমাদেরকে বলেন না। আমার কর্মচারীদের বেতনভাতা আটকে রাখেন। মহবুল্লাহ কলেজে সিসিটিভি ক্যামেরার মনিটর দেওয়া হয়েছে, তার দাম নাকি ১ লাখ টাকা। এটা কেমনে হয়? মিষ্টি কুমড়ার বীজ বিতরণ প্রকল্পের আমি সভাপতি, অথচ আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ক্যারাম বোর্ড বিতরণ করা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো নাম-স্বাক্ষর নেই। ফোন নম্বর দেওয়া নেই। অথচ ফাইলগুলো স্বাক্ষর করতেই হবে। তা না হলে এই টাকাগুলো নয়-ছয় করা হয়। প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে আমার স্বাক্ষর নিতে শেষদিনে এসেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক রাব্বুল হোসেন আরও বলেন, এতোদিন অপেক্ষা করছিলাম, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে পদক্ষেপ নেবে, কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই বঞ্চনা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে শান্তি সমাবেশে প্রতিবাদ করেছি।
যুবলীগের ওই শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আলী শাহ। তিনি জানান, হঠাৎ করেই এমন ভাষায় বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় হতবাক উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা। এটি তার ব্যক্তিগত মন্তব্য, দলের নয়। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাব্বুল হোসেনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান, জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন। তিনি আরও জানান, ইউএনওর বিরুদ্ধে এর আগে কখনও উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিত অভিযোগ দেননি। যখনই মৌখিক কোনো অভিযোগ দিয়েছেন, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ইউএনওকে প্রকাশ্য এমন হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন।