এ ঘটনায় পাকিস্তান স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, তাদের নদীগুলোর স্বাভাবিক জলপ্রবাহের সঙ্গে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপকে তারা ‘যুদ্ধ ঘোষণার একটি পদক্ষেপ’ হিসেবে বিবেচনা করবে।
পাঞ্জাব প্রদেশের সেচমন্ত্রী কাজিম পিরজাদা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চেনাব নদীর জলপ্রবাহে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা (চেনাব) নদীতে এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি, যা কোনোভাবেই প্রাকৃতিক নয়।’
চেনাব নদী ভারতের হিমাচল প্রদেশ থেকে উৎপন্ন হলেও সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী এর পানি পাকিস্তানের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত। তবে গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনার পর ভারত কার্যত এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের সীমান্তঘেঁষা পাকিস্তানের জনবহুল পাঞ্জাব প্রদেশ দেশটির কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মূল ভিত্তি। মন্ত্রী পিরজাদা সতর্ক করে বলেন, ‘যেসব এলাকায় বিকল্প পানির উৎস নেই, সেসব স্থানে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
ইসলামাবাদভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক জিন্নাহ ইনস্টিটিউট দাবি করেছে, ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত ২৬ এপ্রিল ইচ্ছাকৃতভাবে বিপুল পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে পাকিস্তান সেই পানি ব্যবহার করতে না পারে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পাঞ্জাবের উজানে অবস্থিত বাগলিহার বাঁধের স্লুইস স্পিলওয়ে গেট নামিয়ে দিয়ে ‘স্বল্পমেয়াদী শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে পানি আটকে রাখা হয়েছে।
ইন্দাস চুক্তি অনুযায়ী, ভারত নদীগুলোর ওপর বাঁধ বা সেচ প্রকল্প নির্মাণ করতে পারলেও, পানি অন্য দিকে প্রবাহিত করা বা ভাটির দিকে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
এই বিষয়ে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের সাবেক প্রধান কুশবিন্দর ভোরা দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘যেহেতু চুক্তি স্থগিত, তাই আমরা এখন কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই যেকোনো প্রকল্পে ফ্লাশিং করতে পারি।’
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘমেয়াদে পানি পুরোপুরি বন্ধ রাখা ভারতের পক্ষে সম্ভব না হলেও, কখন এবং কতক্ষণ পানি ছাড়া হবে, সেই সময়সূচি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভারত কার্যত বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
জিন্নাহ ইনস্টিটিউটের মতে, ‘পানির ছাড়ার সময়সূচিতে সামান্য পরিবর্তনও চাষাবাদের ক্যালেন্ডারকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করতে পারে এবং ফসলের ফলন মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিতে পারে।’