বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারের গুদামের খাদ্যের মজুদ ১৫ লাখ টনে নেমে এসেছে বলে গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। সরকার এর কোনো প্রতিবাদ করেনি। তারমানে ঘটনাটি সত্য। মধ্যস্বত্বভোগী বা অসাদু ব্যবসায়ীদের যদি শায়েস্তা করতে হয় তাহলে সরকারের গুদামের সক্ষমতা ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের গুদামে যদি এখন ২৫ লাখ টন খাদ্য থাকতো তাহলেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে চলে যেত।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকলে বর্তমানে যে পরিমাণ রয়েছে তাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বর্তমানে যদি টিসিবি ১০০০ ট্রাক খাদ্য বিক্রি করে তাহলে তা বাড়িয়ে ১০ হাজার ট্রাক করে দেয়া যেত। এতে টিসিবি থেকে মানুষ কম দামে খাদ্যদ্রব্য পেত। আর মজুদকারীরা বাধ্য হয়েই খাদ্যদ্রব্যের দাম কমাতো। এজন্য সরকারের খাদ্য মজুদের সক্ষমতা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সাবেক এ গভর্নর বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই দ্রব্যের উপর থেকে শুল্ক কমানো হলে ভোক্তারা উপকৃত হয়। অথচ এদেশে শুল্ক কমানোর পরও দ্রব্যের মূল্য কমে না। অর্থাৎ শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোগ করে সেই অসাধু ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীরাই।
মূল্যস্ফীতি সুদের হার স্থানীয় মুদ্রার দর উঠানামা করলে মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করা কঠিন। সুতরাং এ তিন বিষয়কে সমন্বয় রেখে স্থানীয় মুদ্রা ধরে রাখাই মুদ্রানীতির চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে তাদের আর্থিকভাবে চরম বিপদে পড়তে হয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে মূল্যস্ফীতি গত মাসে কিছুটা কমেছে। অথচ, এটা নিয়ে আমরা উল্লাস শুরু করেছি। কিন্তু এটা হওয়ার কথা নয়। আমাদের মূল্যস্ফীতি আরো অনেক কমিয়ে আনতে হবে।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা একটা ভাঁওতাবাজি। বাংলাদেশের মতো দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার কোনো সুযোগ নেই। এদেশে দ্রব্য মূল্য এবং আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে হলে অবশ্যই সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে চাহিদা ও যোগানের সমন্বয় রেখেই এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।