ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। এ সম্মেলনের আগে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হয়েছে। ৩ ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে তারা চীন-মার্কিন সংঘাত এড়াতে একমত হয়েছেন। খবর বিবিসির।
দুই নেতার আলোচনায় বাণিজ্য, উত্তর কোরিয়ার উসকানিমূলক আচরণ, তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো অভিযানের মতো প্রসঙ্গগুলো স্থান পায়। হোয়াইট হাউজ জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে দুই নেতা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
চীনের শিনজিয়াং ও তিব্বত অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে বাইডেন উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাইওয়ানের ব্যাপারে চীন যে জবরদস্তিমূলক এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিচ্ছে তারও বিরোধিতা করেন তিনি। চীনা নেতাকে বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো সংঘাত বেধে গেলে তা ঠেকানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা একমত হন যে, মুখোমুখি কথা বলার চেয়ে ভালো বিকল্প খুব কমই আছে।
বাইডেন আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের পথগুলো খোলা রাখার ব্যাপারে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। এর ফলে দুই দেশ জরুরি বৈশ্বিক ইস্যু যেমন জলবায়ু পরিবর্তন বা নিরাপত্তাহীনতা-এগুলোর ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এক সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে তা সারা বিশ্বই প্রত্যাশা করে।
জিনপিংকে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলবে। কিন্তু তা সংঘাতে পরিণত হতে দেওয়া উচিত নয়। বাইডেনের সঙ্গে একমত পোষণ করে জিনপিং বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কখনোই হওয়া উচিত নয়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ও জিনপিং পরস্পরকে বোঝেন এবং বেইজিং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা পালটে দিতে চায় না।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট জিনপিং সতর্ক করে বলেছেন-তাইওয়ানের অবস্থান চীনের স্বার্থের কেন্দ্রস্থলে। দ্বীপটিকে চীন তার নিজের অংশ বলে মনে করে। তিনি বলেন, তার দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যেন যথাযথভাবে রক্ষিত হয় তা সারা বিশ্ব প্রত্যাশা করে।
তিনি আরও বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন এমন একটি অবস্থায় আছে-যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে দু-দেশের নেতা হিসাবে তাদের সঠিক গতিপথ নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আগামী দিনে সামনে এগিয়ে নেওয়া এবং উন্নত করার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে হবে। আমাদের এ বৈঠকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর খোলাখুলি মতামত বিনিময় করা প্রয়োজন।
২০২১ সালে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটিই দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। তবে এর আগে তারা পাঁচবার ফোন ও ভিডিও কলে কথা বলেছেন। এছাড়া বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনও তাদের মধ্যে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে তাদের মধ্যে শেষবার যখন কথা হয় তখন তারা ইউক্রেন, কোভিড এবং তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে কথা বলেছিলেন।
আগস্টে মার্কিন কংগ্রেসের নিুকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর বেইজিং ক্ষিপ্ত হয় এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর করার পর চীন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় এবং প্রেসিডেন্ট জিনপিং সে সময় ওয়াশিংটনের সমালোচনা করেন।
এরপর চীন জলবায়ু এবং কোভিড মহামারিসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। সোমবারের বৈঠকের পর এগুলোর কয়েকটি আবার শুরু করতে পারলে এটিকে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হিসাবেই দেখা হবে বলে সংবাদমাধ্যমকে এমন কথা বলেছেন একজন মার্কিন কর্মকর্তা। এ বৈঠকের ফলে দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্প্রতি শীতল হয়ে পড়া সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্মেলনে অংশ নিতে রোববার রাতে বাইডেন বালি দ্বীপে পৌঁছান। সোমবার পৌঁছান চীনের প্রেসিডেন্ট শি। জিনপিং তার স্ত্রী পেং লিয়ুয়ানকে নিয়ে এয়ার চায়না বিমানে করে বিকাল ৩টার দিকে অবতরণ করেন। তাদের ঐতিহ্যবাহী বালিনিজ নৃত্যের মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর জিনপিংয়ের এটিই প্রথম বিদেশ সফর।