তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা চলছে। স্ব-শাসিত দ্বীপটিতে বেইজিং আক্রমণ করলে ওয়াশিংটন সামরিকভাবে রক্ষা করবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করার পর এই উত্তেজনার পারদ বেড়েছে আরও।
জাপান সফরে গিয়ে তাইওয়ান নিয়ে বাইডেনের মন্তব্যের পর চীন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ‘আগুন নিয়ে খেলছে’। সোমবার (২৪ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
চীনের স্টেট কাউন্সিলের তাইওয়ান বিষয়ক কার্যালয় সোমবার জানায়, ‘চীনকে আটকে রাখতে ‘তাইওয়ান কার্ড’ ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এতে করে দেশটি (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেই পুড়ে যাবে।’
এ বিষয়ে চীনের স্টেট কাউন্সিলের মুখপাত্র ঝু ফেংলিয়ানকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পূর্বে প্রতিষ্ঠিত নীতিগুলো ‘লঙ্ঘন করে এমন কোনো মন্তব্য করা বা পদক্ষেপ নেওয়া বন্ধ করতে’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।
তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।
এই পরিস্থিতিতে এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে জাপানের রাজধানী টোকিওতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, চীন হামলা করলে তাইওয়ানকে সামরিকভাবে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত স্ব-শাসিত দ্বীপটিতে চীন আক্রমণ করলে তাইওয়ানকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ‘সামরিকভাবে জড়িত হবে’ কি না; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ‘হ্যাঁ’ উত্তর দেন।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে সিএনএন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, চীন এই দ্বীপটি দখল করার চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সহায়তা নিয়ে তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াবে।
চীন অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে। স্ব-শাসিত এই দ্বীপটির আনুষ্ঠানিক নাম রিপাবলিক অব চায়না। তবে যে নামেই হোক, তাইওয়ানের সাথে ওয়াশিংটনের বেশ উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এক চীন’ নীতিই অনুসরণ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।