যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’র স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি যদি তার এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে তাইওয়ানে পা রাখেন, সেক্ষেত্রে চীনের সামরিক বাহিনী ‘অলসভাবে বসে থাকবে না’। সোমবার এই সতর্কবার্তা দিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের পারস্পরিক কূটনৈতিক তিক্ততার মধ্যেই সোমবার এই হুঁশিয়ারি দিল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান এই দিন বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে পেলোসিকে মার্কিন সরকারের ‘তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি (পেলোসি) যদি সেখানে (তাইওয়ান) সফরের কোনো পরিকল্পনা নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে আমরা বলব— সে পরিকল্পনার পরিণতি খুব গুরুতর হবে।’
‘আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। পিপলস লিবারেশন আর্মি (চীনের সেনাবাহিনী) চুপচাপ অলসভাবে বসে থাকবে না। চীন তার সার্ভভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় অবশ্যই শক্তিশালী ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।’
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এক রাষ্ট্রীয় সফরের উদ্দেশে সোমবার ওয়াশিংটন ত্যাগ করেছেন ন্যান্সি পেলোসি। ওয়াশিংটন থেকে প্রথমে সিঙ্গাপুর যাবেন তিনি; দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সেইন ও প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকোবের সঙ্গে বৈঠকের পর মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সফরেরও কথা রয়েছে তার।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, চলতি এই সফরে তাইওয়ানে যাওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকারের। তারপর থেকে পেলোসির এ সফর নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা চলছিল ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে।
১৯৪০ সালের গৃহযুদ্ধে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় তাইওয়ান। তারপর থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী রাজনীতিকরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করলেও চীন এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে এখনও নিজেদের অংশ বলে দাবি করে।
৩৬ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ ভূখণ্ডের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব এবং প্রায় ৩ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্যের একটি সেনাবাহিনী।
এখন পর্যন্ত অবশ্য খুবই অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকলেও তাইওয়ানে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনো দূতাবাস খোলেনি দেশটি।
তবে তাইওয়ান বিষয়ক একটি আইনের আওতায় এই স্বাধীনতাকামী দ্বীপভূখণ্ডকে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকেই সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।
যেসব ইস্যুতে গত কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে কূটনৈতিক তিক্ততা চলছে, সেসবের মধ্যে প্রধানতম ইস্যু তাইওয়ান।