তাইওয়ান নিয়ে চীন ও ভূখণ্ডটির সরকারের মধ্যে উত্তজনা চলছে অনেকদিন ধরেই। এমনকি এই উপত্যকাটিকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে চেষ্টার কমতি নেই বেইজিংয়েরও। এই অবস্থায় এবার চীনকে পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তাইওয়ান।
বুধবার (৩১ আগস্ট) তাইওয়ান বলেছে, চীনের সশস্ত্র বাহিনী তার ভূখণ্ডে প্রবেশ করলে আত্মরক্ষা এবং ‘পাল্টা আক্রমণ’ করার অধিকার প্রয়োগ করবে তাইপে। মূলত বেইজিং এই দ্বীপটির কাছে সামরিক তৎপরতা বাড়ানোর পর এই হুঁশিয়ারি সামনে এলো। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে নিজস্ব অঞ্চল বলে দাবি করে থাকে বেইজিং। চলতি আগস্ট মাসের শুরুতে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের পর দ্বীপের চারপাশে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালায় দেশটি।
পেলোসির সেই সফরের পর দুই সপ্তাহ পার না হতেই তাইওয়ান সফরে যান মার্কিন আইনপ্রণেতাদের একটি প্রতিনিধি দল। এরপর আবারও দ্বীপটির চারপাশে সামরিক মহড়া শুরু করে চীন।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, তাইওয়ানের কাছে চীনের ‘ব্যাপক মাত্রার’ সামরিক টহল অব্যাহত রয়েছে এবং তাইওয়ান প্রণালীকে দুই ভাগে আলাদা করে ‘অভ্যন্তরীণ সমুদ্রে’ পরিণত করার বেইজিংয়ের ইচ্ছা এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার প্রধান উৎস হয়ে উঠবে।
তাইওয়ানের জেনারেল স্টাফের অপারেশন এবং পরিকল্পনা বিষয়ক ডেপুটি চিফ লিন ওয়েন-হুয়াং এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমাদের ১২ নটিক্যাল মাইল সমুদ্র ও আকাশসীমা রয়েছে এবং এই সীমায় প্রবেশকারী যেকোনো বিমান ও জাহাজকে কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে জাতীয় সেনাবাহিনী আত্মরক্ষা এবং পাল্টা আক্রমণের অধিকার প্রয়োগ করবে।’
এছাড়া তাইওয়ান অভিযোগ করেছে যে, চীনা ড্রোন বারবার চীনের উপকূলের কাছে অবস্থিত ছোট ছোট তাইওয়ানিজ দ্বীপের আশপাশে উড়ছে। লিন ওয়েন-হুয়াং বলছেন, চীনা ড্রোনগুলোর ক্ষেত্রেও একইভাবে ‘পাল্টা-আক্রমণ’ করার অধিকার প্রয়োগ করবে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী। মূলত সতর্ক করার পরও অঞ্চল ছেড়ে না গেলে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিবিসি বলছে, তাইওয়ানের সশস্ত্র বাহিনী সুসজ্জিত কিন্তু পরাশক্তি চীনের ধারে-কাছেও তাদের নাম নেই। তাইওয়ানের বর্তমান সরকার তাদের সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ কর্মসূচি শুরু করেছে এবং একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করায়ও অগ্রাধিকার দিয়েছে।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।
তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।