দেশে চালের বাজার পুরোটাই প্রতারণামূলক ব্যবস্থার ওপর চলছে বলে দাবি করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, আমাদের বাজারব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। চালের বাজার পুরোটাই প্রতারণামূলক। যে নামে চাল তৈরি হয় তা ব্যাগের ভেতরে থাকে না। স্বর্ণা চাল মোটা, এটাকে চিকন করে পুষ্পমতি নামে বিক্রি করা হয়। মিনিকেট নামের কোনো চাল নেই অথচ বাজারে বিক্রি হয়। মোটা চাল চিকন করা হয়। যে নামে চাল সেই নামে চাল বিক্রি করতে হবে। চালের বাজার প্রতারণা চলতে দেওয়া যায় না, এটা বন্ধ করা হবে।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) উন্নয়ন সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
চাল নিয়ে কারসাজি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, পলিশ করে চাল ফেলে দেওয়া হয়, এটা চিকন করা হয়। চালের বাজারে এভাবে প্রতারণা চলতে পারে না। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনে এনে চিকন চাল তৈরি করা হয়। মোটা চাল চিকন করতে তিনটা মেশিন লাগে। এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চালের প্রকৃত পুষ্টি উপরের স্তরে থাকে। অথচ এটা ছেটে ফেলে দেওয়া হয়। এটা চলতে পারে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিজ জাতের নামে চাল বিক্রি করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেটা করবে। বাজারকে সঠিক পথে আনার চ্যালেঞ্জ আছে, তবে সংস্কার করতে হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
আইএমএফের ঋণের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের কিছু কিছু জায়গায় দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো। আইএমএফ আমাদের মোট জিডিপির তুলনায় যে ঋণ দিয়েছে সেটার পরিমাণ খুবই কম। এজন্য বলি- আইএমএফের শর্তে দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের ভর্তুকি কমাতে হতো এবং কিছু দ্রব্যমূল্য বাড়াতে হতো। সুতরাং আইএমএফের ঋণের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। পণ্যের দাম বৃদ্ধির শর্ত আইএমএফের ঋণে নেই।
শামসুল আলম বলেন, আইএমএফের কাছে আমরা যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। আমাদের সার্বিক অর্থনীতির প্রতি আইএমএফ আস্থাশীল বলেই ঋণ দিয়েছে। ঋণ দিতে পেরে আইএমএফ খুব খুশি। পাকিস্তান এখনও আইএমএফের ঋণ পায়নি। কিন্তু আমরা পেয়েছি মানে বেশিই পেয়েছি।’
আইএমএফের ঋণ কোথায় ব্যবহার হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঋণ বাজেটে ব্যবহার করা হবে। তার মানে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই ব্যবহার হবে আইএমএফ ঋণ।
দেশে বৈষম্য কমছে দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈষম্য সব দেশেই বাড়ে। সামাজিক বৈষম্য কমাতে আমরা কাজ করছি। আমরা আড়াই কোটি মানুষকে সাহায্য দিয়েছি। বিনামূল্য বই দিয়েছি বৈষম্য কমিয়ে রাখার জন্য। ২০৪১ সালে কুড়েঘর মিউজিয়ামে রাখতে হবে। সবার হাতে মোবাইল ফোন, ঘরে ঘরে কালার টিভি, কারো পা খালি আছে? তার মানে বৈষম্য কমছে। বৈষম্য কমাতে গিয়ে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
ডিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় উন্নয়ন সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ-উদ-হামান। এতে সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক মফিজুল সাদিক, অর্থ সম্পাদক সাইদ রিপন, দফতর সম্পাদক এম আর মাসফিসহ অন্য সদস্যরা অংশ নেন।