দেশে রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানির ব্যয় বেড়েছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতি বেড়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেন-দেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) সম্পর্কিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রফতানি আয় বাড়ছে না। ফলে বাণিজ্য ঘাটতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধির বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়লে চলতি হিসাব ঘাটতি আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
বাণিজ্য ঘাটতি সামনে কমে আসবে এমন আশার কথা শুনিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এলসি খোলা নিয়ে নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমেছে। যার ফলে ধীরে ধীরে আমদানি ও রফতানির ব্যবধান কমে আসছে। চলতি অর্থবছরের টানা ৩ মাসে বড় অংকের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিলেও অক্টোবরে সেই হার কিছুটা কম। সামনে এসব পদক্ষেপের কারণে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমে আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বিপরীতে বিভিন্ন দেশে ১ হাজার ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এতে মোট আমদানি ও রফতানির হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-অক্টোবর সময়ে রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ সময়ে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই চার মাসে সেবা খাতেও ঘাটতি বেড়েছে। এসময় বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে বিদেশে অর্থ চলে গেছে ৪৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৮৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এসময়ে সেবা খাতে ব্যয় বেড়েছে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ। কিন্তু বিপরীতে বিদেশ থেকে সেবা বাবদ আয় ২৯৭ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৮২ শতাংশ। এতে সেবা খাতে ১৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের ঘাটতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। জুলাই-অক্টোবর সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৭১৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭০৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে আমদানির চাপ কমার সঙ্গে সঙ্গে রফতানি ও রেমিট্যান্সও কমছে। যে কারণে বাণিজ্য ও লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি বাড়ছে। তাই রেমিট্যান্স যে করেই হোক বাড়াতে হবে। তা না হলে বাণিজ্য ঘাটতির এ চাপ আগামী দিনে একটা সময় পর্যন্ত থাকবে। আবার সেই চাপ পড়বে ডলারের ওপর। ডলারের সংকট দূর না হলে রিজার্ভেও চাপ বেড়ে যাবে।
সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ডলারের রেটটা বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত। এক্সপোর্ট, ইমপোর্ট বা রেমিট্যান্সের ডলারের রেটে কোনো ক্ষেত্রেই ডিসক্রিমিনেশন করার প্রয়োজন নেই। আমদানি ও রফতানিতে ব্যালেন্স না আসার একটা কারণ ডলারের ভিন্ন ভিন্ন রেট থাকা।