বৈঠকে ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়ে জোর আলোচনা হয়। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল প্রস্তাব দিয়েছে—আস্থা ভোট, অর্থ বিল ও সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছাড়া সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত ও ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত।
নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী সদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে প্রায় সব দল একমত হয়েছে। কেউ কেউ প্রস্তাব করেছে, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ১০০ করা হোক। তবে কীভাবে এই আসন বণ্টন করা হবে, তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে কোনো দল স্পষ্টভাবে আপত্তি তোলেনি। বরং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিষয়টি প্রায় সবাই সমর্থন করেছে। বিএনপি বলেছে, এই সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ তিন মাস। কেউ কেউ চার বা পাঁচ মাসের মেয়াদের কথাও বলেছেন।
বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংসদ সদস্যদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে, তবে বাকি বিষয়ে স্বাধীনতা থাকা দরকার। জামায়াতের ডা. তাহের বলেন, অর্থ বিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধন ছাড়া অন্য সব বিষয়ে এমপিরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন, এমন ব্যবস্থার পক্ষে তারা।
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ সংসদ সদস্যদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। এটি একটি একনায়কতান্ত্রিক ধারার আইন। তারা চান এটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হোক। তার দল সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবও দিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও ৭০ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে আরও আলোচনা দরকার।
স্থায়ী কমিটি নিয়ে মতভেদ থাকলেও সমাধানের আশা
বিভিন্ন দল সংসদের স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে। জামায়াত বলেছে, অন্তত ৫০ ভাগ কমিটির নেতৃত্ব বিরোধী দলের হাতে দেওয়া হোক। ইসলামী আন্দোলন চায়, সরকারি ও বিরোধী দুই পক্ষের সমন্বয়ে এই নিয়োগ হোক।
নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে দলগুলোর মত
এবি পার্টি, বিএনপি, জামায়াতসহ অনেক দল সংসদে নারীর সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা চায়। কেউ কেউ চায়, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০ করা হোক। খেলাফত মজলিস চায়, আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে নারী সদস্য নির্বাচিত হোক। ইসলামী আন্দোলন চায়, নির্বাচন পদ্ধতি হোক ‘প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন’ ভিত্তিক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে কারও আপত্তি নেই
প্রায় সব দলেরই মত, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার থাকা দরকার। কেউ বলেছে, এই সরকার তিন মাস, কেউ বলেছে চার বা পাঁচ মাস দায়িত্বে থাকবে। জামায়াত ও এনসিপি চায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনও এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন হোক।
বৈঠকে অংশ নেয় ৩০টি দল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠকে ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, এলডিপি, গণফোরাম, বাসদ, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি, এনডিএম, জাসদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি, খেলাফত মজলিস, জাকের পার্টি, গণ-অধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনসহ আরও অনেকে।
কমিশনের বক্তব্য
বৈঠকের শুরুতে সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, সব বিষয়ে একমত হওয়া যাবে না। তবে যেসব বিষয়ে দলগুলো একমত হবে, সেগুলো নিয়ে তৈরি হবে জাতীয় সনদ। জুলাইয়ের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে চায় কমিশন। তিনি বলেন, দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে গঠন করা হবে পরিবর্তিত প্রস্তাব। যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য থাকবে, সেগুলো দলগুলো নিজের ইশতেহারে রাখতে পারবে।
সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে মানুষের কাছে স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলেও জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সময় কম, কিন্তু প্রত্যাশা অনেক। তাই সবাইকে দায়িত্বশীলভাবে এগোতে হবে।