সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও চার মাস সময় মেনে নিতে নারাজ। তাদের দাবি, ৪ মাস নয় বরং এক মাসের মধ্যেই স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন ঘোষণা করতে হবে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা কলেজে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছেন সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিম।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমাদের দীর্ঘদিনের শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে যে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিলাম, সরকার আমাদের সে দাবি আমলে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করে এবং কলেজগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। সাত কলেজের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, রাষ্ট্র আমাদের শিক্ষা বৈষম্য দূর করে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বাস্তবায়নে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। একইসঙ্গে আমরা এই কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সংযুক্তি ও প্রয়োজনে অন্যান্য অংশীজনকে সম্পৃক্ত করার সুযোগের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমরা এ কমিটিকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিটি শিক্ষার্থী এই কমিটিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ স্যারসহ সব সদস্যদের আমাদের সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। তবুও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিকে চার মাস সময় দিয়েছে। যদিও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবু এই দীর্ঘ সময়সীমাটি যৌক্তিকতার দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। বিগত ৪ মাসে সরকারের বিভিন্ন মহলে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে সাত কলেজের এ সমস্যা সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটি ৬ সপ্তাহ সময় নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দেওয়ার কথা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় আমরা শিক্ষার্থীরা নবগঠিত কমিটিকে দীর্ঘ ৪ মাস সময় দেওয়া অতিরঞ্জিত বলে মনে করছি। আমরা নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে ৩০ কার্যদিবস অর্থাৎ ১ মাসের মধ্যে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রজ্ঞাপন জাতির সামনে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।
এই শিক্ষার্থী বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কার্যপরিধি ২ নম্বরে উল্লেখ আছে, সাত কলেজের স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও বিকল্পসমূহ বিবেচনা করা। এই ‘সমকক্ষ’ শব্দটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আর কোনো প্রকার পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ফাঁদে পা দেবে না। সমকক্ষ কিংবা এ জাতীয় সংশয়মূলক কোনো শব্দ শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করবে না।
কার্যপরিধি ২-এ সমকক্ষ কিংবা বিকল্পের কথা উল্লেখ আছে, আমরা মনে করি এ কমিটির স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে সাতটি কলেজের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তৈরি করতে তাদের কোনো বাঁধা নেই বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষার্থী।
মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমেই নতুন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রোডম্যাপ তৈরি করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া শিক্ষার্থীরা বিকল্প কোনো সমাধান চায় না। আরও সহজ ভাষায় বললে এর বাইরে কোনো কার্যকর বা উপযুক্ত সমাধানও নেই। এখন যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে, এ কমিটির সদিচ্ছা থাকলে আগামী ১ মাসের মধ্যে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা সম্ভব। আর যদি এক মাসের বেশি সময় নেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা এ ধীরগতিকে কালক্ষেপণ হিসেবে ধরে নেবে। আমরা আর নতুন কোনো ফাঁদে পা দিতে চাই না।
এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে শেষদিকে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা দিতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হলেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দিন খান। গঠিত এ কমিটি আগামী চার মাসের মধ্যে নির্ধারিত কাজ শেষ করবে বলে জানানো হয়েছে।