চাঁদে মানুষ পাঠানোর বহুল প্রতিক্ষীত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নভোচারীবিহীন আর্টেমিস-ওয়ান রকেটের সফল উৎক্ষেপণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা। তৃতীয় দফার প্রচেষ্টায় গতকাল বুধবার খুব ভোরে রকেটের উৎক্ষেপণ সফল হয়। খবর সিএনএন ও বিবিসির।
নাসার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে এটি একটি ঐতিহাসিক সাফল্য। এর আগে ১৯৬৯ সালে ‘অ্যাপোলো-১১’ মিশনে প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠানো হয়েছিল। নাসার সেই অভিযানে চাঁদে পা রেখেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং এবং এডুইন অলড্রিন । ১৯৭২ সালে নাসার মহাকাশযান ‘অ্যাপোলো-১৭’ মহাকাশচারী জেন সারনানকে নিয়ে নেমেছিল চাঁদে। সেই ঘটনার অর্ধশতক পূর্তিতে আবার চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর লক্ষ্য নিয়েছে নাসা।
নাসার চাঁদে মানুষ পাঠানোর এই ‘মিশন’ সম্পন্ন হবে তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপ ‘আর্টেমিস-ওয়ান’। এটি যাত্রীবিহীন অভিযান । যার মূল লক্ষ্য, চাঁদের মাটিতে নামার সম্ভাব্য ‘ল্যান্ডিং সাইট গুলো চিহ্নিত করা। একই পরীক্ষা হবে মিশনের দ্বিতীয় ধাপেও। তা সফল হলে তৃতীয় ধাপের অভিযানে চাঁদে পাড়ি দেবে মানুষ ।
এর আগে ‘আর্টেমিস-ওয়ান’-এর উৎক্ষেপণ বারবার বিলম্বিত হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট এই উৎক্ষেপণের দিন ধার্য করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে কাউন্ট ডাউন শুরুও হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু মাঝপথে তা থামিয়ে দিতে হয়। রকেটের তরল হাইড্রোজেনের লাইনে ছিদ্র ধরা পড়ে শেষ মুহূর্তে। বহু চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করা যায়নি। যে কারণে প্রথম দফায় অভিযান বাতিল করতে বাধ্য হয় নাসা।
যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে তার পরেও এই অভিযান বাতিল করতে হয়েছিল। এরপর ২ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণের দিন নির্ধারিত হয়েছিল। সেবার তরল হাইড্রোজেনের ট্যাংকে ছিদ্র ধরা পড়ে। বস্তুত, আর্টেমিস-ওয়ান- এর উৎক্ষেপণের সময়ে রকেটের নিচে থাকা চারটি বড় ইঞ্জিনে ৩০ লাখ লিটার প্রচণ্ড ঠান্ডা তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পুড়ে বিপুল শক্তি উৎপাদিত হয়। যার সাহায্যে মহাকাশে পাড়ি দেয় রকেট। অবশেষে বুধবার এই উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে।
নাসার আর্টেমিস মিশন মানুষের মহাকাশ অভিযানে এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। উৎক্ষেপণ করা এই রকেট একটি ক্যাপসুল বহন করবে। এই ক্যাপসুলের নাম ওরাইয়ন। এই ওরাইয়ন চাঁদের চারপাশে পরিভ্রমণ করবে । তবে এই যাত্রায় কোনো মানুষ থাকবে না । যদি সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়, তাহলে পরবর্তী মিশনগুলোতে মহাকাশচারীরা যোগ দেবেন।
নাসা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা তাদের নতুন প্রযুক্তি ‘আর্টেমিস প্রোগ্রাম’ নিয়ে ফিরে আসছে, যার প্রযুক্তি আধুনিক যুগকে সমৃদ্ধিশালী করবে। এই চন্দ্রাভিযানকে নাসা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার একটা প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে। তারা আশা করছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বা তার পরপরই তারা মহাকাশচারীদের মঙ্গল গ্রহে পাঠাবে।