রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজে (পুরোনো হোম ইকনোমিক্স কলেজ) চাঁদা না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শেখ হাসিনা হলের সংস্কারকাজ বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শারমিন সুলতানা সনি ও সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবি করে হলের সংস্কারকাজ বন্ধ রেখেছেন৷ যদিও ছাত্রলীগ নেত্রীদ্বয় তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
এদিকে সংস্কারকাজ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হলের আবাসিক সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷ কলেজটির একমাত্র শেখ হাসিনা আবাসিক হলটি তিনতলা বিশিষ্ট৷ তবে হলের ভবন সংখ্যা তিনটি৷ ১ নম্বর ভবনে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছিল৷ ভবনটিতে ছাত্রীদের থাকার কক্ষে রং করা হয়েছে। বারান্দা ও দরজাসহ বাইরের দেয়ালের রঙেয়ের কাজ বাকি৷ সিঁড়িতে টাইলসের কাজ আংশিক করে ইট, টাইলসের ভাঙা টুকরো, বালু, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রী যততত্র ফেলে রাখা হয়েছে৷
হলের ওই ভবনের অধিকাংশ টয়লেট বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা৷ হলটিতে প্রতি তলায় ৭৮ জন শিক্ষার্থী থাকেন৷ এসব শিক্ষার্থীর ব্যবহারের জন্য প্রতি তলায় চারটি টয়লেট রয়েছে ৷ এরমধ্যে দুটি টয়লেট পুরোপুরি বন্ধ। যে দুটি চালু রয়েছে সেখানেও একটির পয়োনিষ্কাশন পাইপ ছোট হওয়ায় মাঝেমধ্যেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ৷ এসব কারণে স্বাস্থ্যঝুকিতেও রয়েছেন শিক্ষার্থীরা৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, শুনেছি ছাত্রলীগের সঙ্গে ঠিকাদারের ঝামেলা হয়েছে। এ কারণেই নাকি কাজ বন্ধ৷ অর্ধেক কাজ করে ফেলে রেখেছে। আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে৷
কলেজটির অবকাঠামো উন্নয়নকাজ পরিচালিত হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক সহকারী প্রকৌশলী জাগো নিউজকে বলেন, কিছু ইন্টারনাল সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ আছে। ঈদের পরে আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি৷ সেখানে উনাদের (ছাত্রলীগের) কিছু দাবি-দাওয়া আছে। যা ঠিকাদার ঠিকভাবে মিটাতে পারছেন না অথবা উনারা (ছাত্রলীগ) যেরকম ভাবে চাচ্ছেন ঠিকাদার সেভাবে রাজি হচ্ছেন না৷ সেসব কারণে কাজ করা যাচ্ছে না৷
এ সহকারী প্রকৌশলী আরও বলেন, কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি৷ আমার প্রকৌশলীও আলোচনা করেছেন৷ সেখানকার স্টুডেন্ট লিডারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে৷ উনারা (ছাত্রলীগ) আলোচনায় বসতে বলেছেন। আমার ইঞ্জিনিয়ার কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে তাদের জানিয়েছেন। বসলে কলেজ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই বসতে হবে৷ তবে সেই বসাটা মনে হয় এখনো হয়নি।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর সোনিয়া বেগম বলেন, আমরা ঈদের আগেই রমজানে কাজটা শেষ করে ফেলতে চাচ্ছিলাম। ঠিকাদার বলেছেন, তিনি কাজ করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। মেয়েদের (কলেজ শাখা ছাত্রলীগের) কাছ থেকে ডিস্টার্ব ফিল করছেন। মেয়েদের যখন বললাম, আমিও তো চাচ্ছি যে কাজটা হয়ে যাক তখন মেয়েরা বললো- ‘আপা আপনি চিন্তা কইরেন না, ঈদের পর এসে ওরা কাজ শুরু করবে৷’ আমি বলেছি, যাই করো বন্ধের মধ্যে যেন কাজটা শেষ হয়ে যায়৷ যেন ছাত্রীরা কলেজ খোলার পর হলে এসে অসুবিধায় না পড়ে।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, শিক্ষা প্রকৌশলের কাজ ধরাতো অনেক কঠিন৷ চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমার পরিচিত, আমি রিকোয়েস্ট করে কাজ নিয়ে এসেছি৷ এখন কলেজ খোলার পরও কাজ হচ্ছে না৷ আমি মেয়েদের পুনরায় ডেকে বলেছি, ‘তোমরা তো বলেছিলে ঈদের পর ওরা কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখনো তো শুরু করেনি।’ তখন ওরা (শারমিন-প্রভাতী) বললো, ‘আপা ঠিক আছে, আমরা দেখবো, আপনি চিন্তা কইরেন না৷’
সোনিয়া বেগম বলেন, একবার একটা কাজে বাধা পড়লে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। এখন দেখা যাক কী হয়৷ যে কারণেই হোক একটা বাধা পড়েছে৷ আমরা কন্টিনিউয়াস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারকাজ শুরু করা হবে৷
তবে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার ইয়াসিন ৷ তিনি বলেন, বরাদ্দ নেই বিধায় কাজটা স্লো হয়ে আছে৷ আমাকে কেউ ফোন করে কাজটা বন্ধ করেনি৷ আমাদের ইন্টারনাল ফাইন্যান্সিয়াল সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ। এ কাজের টেন্ডারও হয়নি৷ শিক্ষা প্রকৌশলে অনেক ইমার্জেন্সি কাজ মৌখিক নির্দেশেই হয়৷
ভয়ে মুখ খুলছেন না কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে এ ঠিকাদার বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি৷ ছাত্রলীগ করেছি, যুবলীগ করেছি৷ আমার কাছে চাঁদা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷ আমরা দলকে সহায়তা করি৷ ১৫ আগস্ট আসছে, দলীয় প্রোগ্রাম আছে৷ আমরা প্রোগ্রাম করি৷ সরকারি দলের লোক আমি, আমার ভয় পাওয়ার কিছু নাই৷
অভিযোগ বিষয়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শারমিন সুলতানা সনি বলেন, সংস্কারকাজ কেন বন্ধ আমি জানি না৷ আমি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় এসেছি৷ এরকম কোনো কথা আমি জানি না৷ এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া৷ আমি দীর্ঘদিন ধরে হলে নাই৷
সাধারণ সম্পাদক আকলিমা আক্তার প্রভাতী বলেন, কাজ বন্ধের কারণ জানা নেই। কলেজের অধ্যক্ষ ভালো বলতে পারবেন৷ আর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ কারা কাজ পেয়েছে বা কাজের অগ্রগতি কী, এসব বিষয়ে আমরা জানিনা। এ নিয়ে কারও সঙ্গে আমাদের কোনো কথাও হয়নি৷
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স শাখা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধীনে৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান জাগো নিউজকে বলেন, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে জানিয়েছে, সেখানকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু স্টাফ কলেজের মেয়েদের প্রতি অসৌজন্যমূলক কিছু ইঙ্গিত বা এ ধরনের কিছু একটা করেছে৷ এ ঘটনার প্রতিবাদে কাজ চলাচালীন কলেজে সুষ্ঠু পরিবেশ দাবি করেছেন তারা। আমি এমনটাই শুনেছি৷ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো৷
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান শওকতের সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এসব বিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ জানায়নি৷ আমি যেটা জানি ঈদের পর লেবাররা আসতে একটু দেরি করেছে৷ তাই কাজ শুরু হতে বিলম্ব। চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার কিছু জানা নেই। তারপরও আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো৷
মৌখিক নির্দেশে কাজ শুরু হয়েছে, ঠিকাদারের এ বক্তব্য বিষয়ে তিনি বলেন, মৌখিক নির্দেশে কাজ শুরু করার কোনো নিয়ম নেই৷ মৌখিক নির্দেশে কাজ শুরু করবে কেন? আমি খতিয়ে দেখবো কাজটা আমার এখান থেকে ওয়ার্ক ওর্ডার দেওয়া নাকি উনারা মৌখিক নির্দেশে করেছেন৷ উনি (ঠিকাদার) এটা বলে থাকলে তো নিজেই অনুচিত করেছেন৷ অফিসিয়াল অর্ডার ছাড়া কেন তিনি ইনভেস্ট করবেন৷