চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বটতলাহাটে দুই লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় এক ব্যক্তিকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে। বিবস্ত্র করে ওই ব্যবসায়ীকে বটতলাহাটের জনবহুল সড়কে হাঁটিয়ে নেওয়ার ভিডিও ধারণ করা হয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনা ঘটে। তবে রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ধারণকৃত ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) ভোরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, কিছু লোক মিছিলের মতো হাঁটছে আর সামনে উলঙ্গ অবস্থায় হাঁটিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভুক্তভোগীকে। বিবস্ত্র ওই ব্যক্তি দাঁড়ালে বেশ কয়েকজন যুবক তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বটতলাহাট এলাকার প্রত্যাক্ষদর্শী এক চায়ের দোকানদার ঘটনার বর্ণনা করেন। তবে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে ওই ব্যক্তির অবৈধ সম্পর্ক ছিল। ঘটনার রাতে ওই নারীর বাড়িতে যান তিনি। সেসময় অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ওই ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে।
তাকে উলঙ্গ অবস্থায় হাঁটিয়ে ওই ব্যক্তির ভাইয়ের বাড়ির সামনে থেকে ঘুরিয়ে আনা হয়। যারা ওই ব্যক্তিকে অনৈতিক কাজের অভিযোগে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে প্রকাশ্যে রাস্তায় ঘুরিয়েছেন তারা সবাই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির লোকজন।
নির্যাতিত ওই ব্যবসায়ীর ভাতিজা মো. বাবু জানান, চাঁদা না দেওয়ায় চাচাকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো হয়। এ সময় তাকে একটি লুঙ্গি দিতে গেলে আমাকেও তারা ছুরি দেখিয়ে হুমকি দেয়। ঘটনার রাতেই থানায় জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এনিয়ে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
যে ব্যক্তিকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে চাননি। তবে রোবাবার তিনি এ ঘটনায় মামলা করেছেন। মামলা এজাহারে তিনি বলছেন, রায়হান নামে এক ব্যক্তির কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামিরা আমাকে আটকে রেখে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হলে মারপিট করে চাকু দেখিয়ে নগদ সাড়ে ১৪ হাজার টাকা ও একটি স্মার্ট ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তাকে জ্যাকেট, প্যান্ট ও গেঞ্জি জোরপূর্বক খুলে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরায় এবং ভিডিও স্থির ধারণ করে। পরবর্তীতে আসামিরা তাদের মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের কথায় সাড়া না দেওয়ায় পরস্পর যোগসাজসে ভিডিওটি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ মামলায় মো. বাক্কারকে প্রধান আসামি করে আরও সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫-৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আলমগীর জাহান জানান, বিবস্ত্র করে ব্যবসায়ীকে ঘোরানোর ভিডিওটি দেখার পরে আমরা বটতলা হাট এলাকায় অভিযান শুরু করি। অভিযানে এজাহার নামীয় তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এরা এলাকার চিহ্নিত বখাটে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।