আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে ‘জাপানি হান্নানের’ অত্যাচারে দক্ষিণখান এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এতদিন মানুষের ওপর অত্যাচার করে আসছিলেন। রাজনৈতিকভাবে কোনো পদ-পদবী না থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চলতেন জাপানি হান্নান। বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ছবির সঙ্গে নিজের ছবিটি জুড়ে দিয়ে বাড়ির সামনে একটি সাইনবোর্ডে ঝুলিয়ে রাখতেন। লাইসেন্স করা একটি শটগান ও পিস্তল সঙ্গে নিয়ে সাঙ্গপাঙ্গসহ ঘোরাঘুরি করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাখতেন। সামান্য কারণে অস্ত্র বের করে ভয় দেখাতেন। এলাকায় বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজে ও স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকের কারবারসহ নানা অপকর্মে সরাসরি জড়িত ছিল জাপানি হান্নান।
প্রকাশ্য দিবালোকে বুধবার ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদকে (৩৯) গুলি করে হত্যাসহ দুই মামলায় হান্নানের পাঁচ দিন ও অপর সাত জনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সাঈদের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রিমান্ড দেওয়া অন্য আসামিরা হলেন—জাপানি হান্নানের ছেলে ইকরামুল ইসলাম, হান্নানের ভাই শফিকুল ইসলাম, তাদের সহযোগী আল আমীন প্রধান, খোরশেদ আলম, জহুরুল ইসলাম রিপন, নুরুন নবী ও মোশারফ হোসেন।
জাপানি হান্নান গ্রেফতারের পর থেকে এলাকাবাসী জানাচ্ছেন তার নানা কুকীর্তির কথা। হান্নানের মনমতো কোনো কাজ না হলেই নিজের সাঙ্গপাঙ্গ দিয়ে বাধা প্রদান, মারধর ও অস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিতেন হান্নান। এলাকার ময়লার বাণিজ্যও গত ১০ বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন এই হান্নান। সম্প্রতি ময়লার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহেল রেজার লোকজনের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। ব্যবসায়ী রশিদের আগে হান্নান আরো দুই জনকে গুলি করেছেন বলে জানা যায়।
১৯৯৬ সালে দক্ষিণখান এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে রেষারেষির কারণে দেশ থেকে পালিয়ে জাপানে চলে যায় হান্নান। ২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে একবারে দেশে ফেরেন। পরে বাড়ি নির্মাণ করে নাম দেন জাপানি কটেজ। সেই থেকে এলাকায় সবাই তাকে জাপানি হান্নান বলে চেনে।
ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবীর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক রানা বলেন, আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ সংগঠনের কোনো পদেই নেই হান্নান। তার নামই শুনেছি বুধবারের হত্যাকাণ্ডের পর। হান্নানের পদ-পদবী না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণখান থানার ওসি শিকদার মো. শামীম হোসেনও।