চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. নুরুল আমিন রুহুল ও সাবেক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৩০টি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০ জনের বেশি নেতা-কর্মী। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আজ শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার মতলব সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বেলা ১১টায় জেলা স্টেডিয়ামে তৃণমূল প্রতিনিধি সভা ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সভায় যোগ দিতে সকাল ৮টা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল আমিন রুহুলের অনুসারীরা মতলব সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকায় তাঁরা একটি মঞ্চও তৈরি করে। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মঞ্চের পাশ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জেলা শহরে যাওয়ার সময় রুহুলের অনুসারীরা তাঁকে অভিনন্দন জানান। ওই মঞ্চে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বক্তব্য দেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
পরে সেখান থেকে জেলা শহরের উদ্দেশে রওনা দেন সংসদ সদস্য নুরুল আমিন রুহুল। সকাল পৌনে ১০টার দিকে সেখানে মায়া ও রুহুলের লোকজন মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা লাঠিসোঁটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে অন্তত ৩০টি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ভাঙা হয় মঞ্চ। আহত হয়েছেন ১০ জন।
আহতদের মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর এলাকার শরিফ মিয়া, আজমত উল্লাহ ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাইশপুর এলাকার মো. নাঈমকে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকিদেরও বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি। খবর পেয়ে চাঁদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত ও মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। উভয় পক্ষের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হামলায় আহত মাহবুবুর রহমান সেলিম বলেন, ‘আমি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামছুল আলমের গাড়িবহরে ছিলাম। মতলব সেতুর কাছে পৌঁছাতেই হঠাৎ করে একদল লোক এসে আমার গাড়িতে হামলা করে এবং ভাঙচুর চালায়। এ সময় আমার গাড়িতে থাকা সবাই আহত হয়।’ সংসদ সদস্য মো. নুরুল আমিন রুহুলের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) লিয়াকত আলী ও মতলব উত্তর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহসিন মিয়া মানিক অভিযোগ করেন, এলাকায় ত্রাস ছড়ানো এবং রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেই মায়ার লোকেরা তাঁদের ওপর পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছেন। এতে তাঁদের পক্ষের ১০ কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের লোকজনের ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য সাবেক মন্ত্রী ও চাঁদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর অনুগত হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতা সেলিম রেজাসহ বেশ কয়েকজন কর্মী দাবি করেন, তাঁদের ওপর সংসদ সদস্য রুহুলের লোকেরা এ হামলা চালিয়েছেন। ঘটনাটির জন্য তাঁরা দায়ী নন। মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া বলেন, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত ও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা করেনি।