চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। এতে কয়েক দফা মারধরে দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
রোববার (১৪ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটাপাহাড় রোডে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার ভিডিও করতে চাইলে সাংবাদিকদের ফোন নিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে এ তথ্য জানান।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার, তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার স্লোগানে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়।
তবে চবি শাখা ছাত্রলীগ নেতা আবরার শাহরিয়ারের দাবি, শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনা গদি ছাড় স্লোগান দেওয়ায় তাদের তাড়া করা হয়। তিনি বলেন, তারা আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে উসকানি দিয়েছে। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে গদি ছাড়তে বলবে, এমনটা মেনে নেওয়া হবে না।
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজনের কাছে জিজ্ঞেস করেছি, তুমি রাজাকার? সে বলেছে হ্যাঁ। আমি আবার জিজ্ঞেস করেছি। তারপর তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করেছি, তুমি রাজাকার? সে বলেছে, হ্যাঁ। আর কোনো ছাড় নেই। সে রাজাকার এবং একই সঙ্গে সে শেখ হাসিনাকে গদিচ্যুত করতে চায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জিরো টলারেন্স।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এ মিছিল শহীদ মিনার অভিমুখে যাওয়ার পথে মিছিলের পেছনে ফটকা ফাটিয়ে তেড়ে আসেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
তারা প্রথমে অল্প কয়েকজন ছিলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই অনেক নেতা-কর্মী এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। ওই সময় চবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সুমন চৌধুরীকে অনেক মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। মারধরের শিকার আরেক শিক্ষার্থীর নাম ইমদাদ ওয়াসিম।
এ বিষয়ে চবি ছাত্রী সুমাইয়া সিকদার বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিলের পেছনে প্রথমে ফটকা ফাটায়। তারপর তেড়ে এসে আমাদের যে কয়েকজন সামনে ছিল, তাদের চড়-থাপ্পড় মারে। নারী শিক্ষার্থীদের খুব বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে। এর মধ্যে একটা ছেলেকে অনেকজন মিলে অনেক মারধর করেছে। এতে অন্তত দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
চবি ছাত্র মাহফুজুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অপপ্রচার চালিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। তারা যে দাবি করেছে, এমন কোনো স্লোগান শিক্ষার্থীরা দেয়নি। আমাদের স্লোগান স্পষ্ট।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও চবি শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোববার সংবাদ সম্মেলনে যে কথাটা বলেছেন, সেখানে যেটা মিন করা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছাড়া সবাই রাজাকার। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে জিরো পয়েন্টে গেছি এবং মিছিলের একপর্যায়ে ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় দুই-তিনজন আহত হয়। তারপরে আমরা সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই।