বগুড়ার শেরপুরের উঁচুলবাড়িয়া গ্রামে চৌদ্দ মাস বয়সী শিশুকে ঘুম থেকে তুলে ডোবায় ফেলে হত্যা করেছে এক পাষন্ড পিতা। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে কোনো এক সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে পানিতে ছুড়ে ফেলে জাকির হোসেন। মঙ্গলবার ভোরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই পুকুর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। পরে জাকির হোসেনকে (৪৫) আটক করা হয়। তিনি উঁচুলবাড়িয়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। সেইসঙ্গে ঘাতক পাষাণ্ড বাবা জাকিরকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান। নিহত শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল মোছা. হুমায়রা খাতুন। এ ঘটনায় শিশুর মা জাকিরকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মধ্যযুগীয় এই অমানবিক ঘটনায় নির্বাক স্বজনরা।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানান, গত সাত বছর আগে জাকিরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের নামা সিংড়াপাড়া গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালই চলছিল তাদের সংসার। এক বছরের মাথায় একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম মোছা. জান্নাতি খাতুন। বর্তমানে বয়স ছয় বছর। এরপর বাবা জাকিরের প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন তিনি। সন্তানকে অন্যের কাছে লালন পালন করারও সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন ইতিপূর্বে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যও হয়। তবে দীর্ঘদিন এ নিয়ে কোন কথাবার্তা না হলেও হঠাৎ করেই ঘটে এমন অমানবিক ঘটনা।
নিহত শিশুটির মা রাবেয়া খাতুন জানান, মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি হুমায়রা খাটের ওপর নেই। পরে পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে বিষয়টি জানাই। সেইসঙ্গে আমার বোন-দুলা ভাইকে খবর দেই। স্থানীয় প্রতিবেশি লোকজনকেও জানানো হয়। এরপর সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সন্তানকে না পেয়ে একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে চাপ দেন তারা। পরে শিশুটিকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন জাকির। মেয়ে সন্তান নিয়ে কলহ হলেও বেশ কয়েক বছর এ নিয়ে কথা হয়নি, তবে স্বপ্নে বড় মেয়েকে চাওয়ায় ছোট মেয়েকে হত্যা করেছে বলে দাবী করে হত্যাকান্ডের বিচার চেয়েছেন শিশুর মা।
শেরপুর থানার ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার জানান কন্যা সন্তানের কারনেই হত্যাকান্ড, শিশুটির লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত জাকিরকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।