নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের জন্য একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ‘জাতীয় সরকারের’ যে রূপরেখা দিয়েছেন তাতে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানো হলেও যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের কেউ মনে করছেন এটা তাদের জন্য বিব্রতকর।
সম্প্রতি জাতির সংকট নিরসনে ‘জাতীয় সরকার’ শিরোনামে একটি লিখিত প্রস্তাব বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার প্রস্তাবে জাতীয় সরকারে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বা ড. কামাল হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন৷ তার প্রস্তাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি কয়েকটি দপ্তরের দায়িত্বে কারা থাকবেন তাদের নামও উল্লেখ করেছেন৷ তাতে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমান এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের নাম রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের নামও রয়েছে৷ আছে পেশাজীবীদের নাম৷
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু জাগো নিউজকে বলেন, একজন মানুষ হিসেবে মতামত দেওয়ার অধিকার আছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে মতামত দিয়েছেন সেটাকে আমি তার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে আমি মনে করি। তিনি জাতীয় সরকারের যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন ওটাই আমাদের বক্তব্য।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ বলেন, আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এটা উনার ব্যক্তিগত মতামত ও প্রচেষ্টা। জাতীয় সরকার কখনো আমাদের গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া বাংলাদেশে নেই। পুরো প্রক্রিয়াটাই একটা ধূম্রজাল।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপির প্রতিনিধি বিএনপি ঠিক করবে। বিএনপির প্রতিনিধি, বিএনপিই জানে না। উনি (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) নাম দিয়েছেন এটা কথা হলো। যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তাদের বিব্রত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের যে কোনো নাগরিক তার প্রস্তাব দিতে পারেন৷ জাফরুল্লাহ সাহেবও তার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ সেটা তার স্বাধীনতা৷ জাফরুল্লাহ সাহেব যা ভালো মনে করেছেন তাই বলেছেন৷ তবে আমাদের দলের অবস্থান হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে৷ সেই নির্বাচনের পর আমরা সরকার পরিচালনায় জাতীয় সরকার গঠন করব৷ সেটা হবে একটা নির্বাচিত সরকার৷ দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান মেরামত করার প্রয়োজন পড়বে, সংস্কার করতে হবে তাই আমরা জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করেছি৷
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি তার মতামত প্রকাশ করেছেন। তবে নির্বাচনে জয় লাভের পর জাতীয় সরকার গঠনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতামত রয়েছে।
যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তার প্রস্তাব দিতে পারেন। এটা পর্যালোচনা করার মতো দৃশ্যমান কিছু নেই; তাই এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমার মনে হয় এই মুহূর্তে জাতীয় সরকার নিয়ে কেউ ভাবছে না। উনি (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) জাতীয় সরকারের ভাবনা দিয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি অনেকে অনেক সরকার বানানোর কথা বলছেন। তাদের বলব, তার আগে তো শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। এই সরকারকে বিদায় না করে কীভাবে আরেকটি সরকার হবে? বরং বর্তমানে যে ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় আছে তারাই লাভবান হবে। তাই আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে বিদায় করি।