জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুদা দারিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন করে সুধি সমাবেশের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের উন্নতি হয়, দেশের মানুষের অগ্রযাত্রা বৃদ্ধি পায় সেটাই প্রমাণিত সত্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি কাজী নজরুলের ভাষায় বলতে চাই, অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায় পিছে চাব কোন মতে! তার সাথে যুক্ত করি। এগিয়ে যাবো আমরা দুর্বার গতিতে, এগিয়ে যাবে বাঙালি, সকল বাধা অতিক্রম করে গড়ে তুলবো জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুদা দারিদ্র মুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। এসময় মেট্রোরেলকে স্মার্ট বাংলাদেশের নতুন সংযোজন হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মেট্রোরেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্রুত গতির রেলযুগে প্রবেশ করল। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে মেট্রোরেল।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি ধাপে এগিয়ে নিতে পারলাম। যার নাম হচ্ছে মেট্রোরেল। মেট্রোরেল চালাতে আর বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না। আমরা নিজেরাই গ্র্যাজুয়েট তৈরি করে এটি পরিচালনা করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে অনুরোধ করবো আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাই যত্নশীল হবেন। সবাই সচেতন হতে হবে।
বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সশ্রদ্ধ সালাম জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে। এই যাত্রায় দেশের মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারা সহযোগিতা না করলে পদ্মা সেতু হতো না, মেট্রোরেল হতো না।
তিনি বলেন, আজকে প্রথম ফেস উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন করেছি। বাকিকাজ শেষে মতিঝিল পর্যন্ত উদ্বোধন করব। মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক। এটি প্রথম দেশের বৈদ্যুতিক রেল, দূর নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হবে। এটির সর্বোচ্চ গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। এটি পরিবেশবান্ধব, তাই যুগপোযোগি একটি যান হবে মেট্রোরেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছিলাম ঢাকার যানজট নিরসনে কাজ করব। আজকে মেট্রোরেল সেই মাইলফলক স্পর্শ করেছে। আরও কাজ চলছে, সমীক্ষা চলছে।
মেট্রো প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে ট্রেনিং অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর নতুন ১২ হাজার গ্র্যাজুয়েট ও মাঠ প্রকৌশলীর কর্মসংস্থান হবে। যেটা বেকারত্ব শুধু দূর না, আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে। ফলে মেট্রোলের নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না। আমরা নিজেরাই সব পরিচালনা করতে পারব।
শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেলে নারীদের জন্য আলাদা কোচ থাকবে, প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য সুব্যবস্থা থাকবে, শিশুদের পরিচর্যার ব্যবস্থা থাকবে মায়েদের জন্য। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা পয়সায় ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন। এসময় মেট্রোরেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশের মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। তার আগে তিনি উদ্বোধনীস্থলে পৌঁছান। বেলা ১১টার পর উদ্বোধনী ফলকের প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) জনসম্মুখে উন্মোচন করেন। তার সঙ্গে আছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। প্রতিরূপ উন্মোচনের পর মোনাজাত করা হয়।
সুধী সমাবেশের প্রথমে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তমোহিদে, বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। উত্তরায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দিয়াবাড়ি (উত্তরা) স্টেশন থেকে মেট্রোরেল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী নিয়ে আগারগাঁওয়ের দিকে ছুটবে। প্রথম যাত্রার যাত্রী হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। তবে সাধারণ যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন বৃহস্পতিবার থেকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লা নুরী, মেট্রোরেল কোম্পানীর এমডি এম এন সিদ্দিকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।