সবুজে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বাচল আমেরিকান সিটির ক্যাম্পাসে দুইদিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হবে আগামী ৯ নভেম্বর। চলবে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত।
গ্রিন ইউনিভার্সির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক এই কনফারেন্সে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষক-গবেষকরা অংশ নেবেন। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন দেশের স্বনামধন্য শিক্ষক-গবেষকরা।
‘বিশ্ব মোড়কে, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের সমস্যা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিভাগ- ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ মিলে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে প্রায় ৪০০শ’র বেশি রিসার্চ পেপার জমা পড়েছে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ৩০৬টি পেপার নির্বাচন করা হয়েছে। দুইদিনে মোট ৬২টি সেশনে গবেষকদের এই রিসার্চ পেপারগুলো তুলে ধরা হবে।
বাছাইকৃত গবেষণাপত্রে সমাজ-রাষ্ট্র যোগাযোগ, পরিবর্তিত সময়ে সাংবাদিকতা, এআই, নয়া গণমাধ্যমের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফেসবুকের ভূমিকাসহ নানাবিধ তথ্য উঠে আসবে।
সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব গবেষণা কর্ম উপস্থাপন করবেন। পাশাপাশি রিসার্চ পেপার থেকে যে সকল প্রস্তাবনা থাকবে, সেগুলো বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর ড, খাজা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছি ইনোভেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন ফর ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক সম্মেলনের। যেখানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, গবেষকরা অংশ নিচ্ছেন। কয়েকটি পর্বে সম্মেলনটি সাজানো হয়েছে। যেখানে আমন্ত্রিত অতিথিদের বক্তব্য রয়েছে, প্রযুক্তিগত বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে এবং গবেষণাপত্র রয়েছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অ্যাকাডেমিকাল আলোচনার বাইরে গবেষণাতেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উৎসাহিত করে। যার ধারাবাহিকতায় তৃতীয়বারের মতো আমাদের আইটিডি সম্মেলনের আয়োজন। আমরা সবাইকে এই কনফারেন্সে অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
আইটিডি সম্মেলন নিয়ে নিজের উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন গ্রিন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম যোগাযোগ বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. অলিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতা বিভাগের ৬৯টি গবেষণাপত্র এই সম্মেলনে উপস্থাপিত হবে। পাশাপাশি আমাদের বিভাগ ও কুমিল্লা বার্ডের যৌথ উদ্যোগে একটি উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। আমি মনে করি, এ ধরনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের মাধ্যমে গ্রিন ইউনিভার্সিটি তার সক্ষমতার জানান দিচ্ছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করছে।’
সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরা শরমিন বলেন, ‘আমাদের এই সম্মেলনটি এমন একটা সময়ে হচ্ছে, যখন বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নবীনদের হাত ধরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। সাংবাদিকতার হাত ধরে সমাজ পরিবর্তনে কী কী ভূমিকা রাখা যায়, গবেষণাপত্রে তারা সেসব তুলে ধরছে। আমি আশা করি, এই নবীন গবেষকদের হাত ধরেই আমরা নতুন নতুন পথ খুঁজে পাব রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক শামীম মন্ডল বলেন, ‘প্রস্তাবিত গবেষণা কর্মে গবেষকগণ অ্যাকাডেমিক জায়গা থেকে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রয়োগিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয়ে ঘটিয়ে নতুন অন্তর্দৃষ্টি সন্ধান করেছেন। তিন বিভাগের আয়োজনে কনফারেন্সটি মূলত আন্ত কাণ্ড বা ইন্টারডিসিপ্লিনারি ঘরানার। তাই আয়োজনে সন্নিবেশ ঘটবে বিচিত্র ভাবনা এবং অনুসন্ধান। সেই সব অনুসন্ধান থেকে প্রাপ্ত অন্তর দৃষ্টি আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থা এবং কাঠামোকে বদলে দিতে সক্ষম হবে বলেই আমার বিশ্বাস।’
সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিভাগে এ বছর স্বাস্থ্য, পরিবেশ সম্পর্কিত একাধিক গবেষণাপত্র জমা পড়েছে। যেখানে বাংলাদেশ কীভাবে একটি টেকসই উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে পারে গবেষকরা সেই বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত দিক থেকে পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে আত্মনির্ভরশীল দেশের কাঠামো তৈরির বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।’
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ অ্যাক্টিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
দুই দিনের এই আয়োজনে শিক্ষক-গবেষকদের বাইরে দেশের স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্বরাও উপস্থিত থাকবেন।