বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ড. ইউনূস।
অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, আমরা এই ভবনটি বানিয়েছিলাম অতি সম্প্রতি। কারণ আমরা যখন সবাই গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলাম তখন আমাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম সেখানেই ছিল। যখন আমাদের যাওয়ার পালা হলো তখন আমরা নিজেদের জন্য ভাবনা-চিন্তা করে এই ভবনটি করেছি, যেখানে শান্তিতে কাজকর্ম করতে পারব। আমরা খুব আনন্দিত ছিলাম, আমরা এখানে শান্তিতে কাজকর্ম করছিলাম, বিদেশি লোকজন আসছিল, আমাদের লোকজনই এখানে কাজ করছিল। হঠাৎ চার দিন হলো বাইরের একদল লোক গত ১২ তারিখে এসে এটা দখল করল।
ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আছি উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, তারা তাদের নিয়মে এটা চালানোর চেষ্টা করছিল। আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলাম না, বাইরের এসব লোক কারা! আমরা পুলিশকে খবর দিলাম যে এখানে এরকম কাণ্ড হচ্ছে আপনারা এসে ঠিক করে দিয়ে যান। পুলিশ তো প্রথমে গ্রহণই করল না। একবার এসে তারা ঘুরে গেল, কিন্তু তারা কোনো অসুবিধা দেখল না। আমি তাদেরকে বললাম, একদল লোক এসে রাতে তালা দিয়ে যাচ্ছে, আবার সকালে খুলে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এখতিয়ার, জবরদখল, তাদের ব্যবহার দেখে মনে হলো আমরা এটা কোন জগতে এসে পড়লাম! এখনো এ অবস্থা বিরাজমান। আমরা আজও জানতাম না, আমাদের বসতে দেবে কি দেবে না।
নোবেলজয়ী এই অধ্যাপক বলেন, ‘ওই দিন (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে তারা ভবনে তালা মেরে রেখেছে। নিজের বাড়িতে অন্য কেউ যদি তালা মারে, তখন কেমন লাগার কথা আপনারাই বলেন। তাহলে দেশে আইন–আদালত আছে কিসের জন্য। তারা আদালতে যেতে চায় না। আমরা জীবনে বহু দুর্যোগ দেখেছি। এমন দুর্যোগ আর কখনো দেখিনি।’
ড. ইউনূস বলেন, নিজের বাড়িতে যদি বহিরাগত লোকজন এখানে বসে, ওখানে বসে, আর এখানে আমরা বসব তখন কি রকম লাগে বলেন। জিজ্ঞাসা করা হলো-কেন এরকম করছেন? তখন বলে, এখানের সম্পত্তি নাকি তাদের বাবার ছিল। আমরা দখল করেছি। বাবার সম্পত্তি হলেই কি জবরদখল করতে পার! আইন-আদালত তাহলে কীসের জন্য? সেখানে যাও, সেখানে প্রমাণ করো।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা বহুরকম দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাই, এরকম দুর্যোগ দেখি নাই কোনোদিন। হঠাৎ বাইরের কিছু লোক এসে বলল যে, এটা আমাদের ঘর, সরেন, সব কাগজপত্র দেন। সেই কথাটাই জানাতে আজ আপনাদের ডেকেছি। আপনারা দেশবাসীকে জানান, আমাদের দুর্দশার কথা, আমরা আসলে কী অবস্থার মধ্যে আছি। কি হচ্ছে এখানে, আমাদের গতি কি! কীভাবে চলবে সামনের দিন।
দেশবাসীকে বর্তমান অবস্থার ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, এভাবে একটা দেশ চলে কী করে? যেখানে নিজের কথা ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। শুনেছি, এখানে মিছিল হচ্ছে, ঝাড়ু নিয়ে মিছিল হচ্ছে, কেন হচ্ছে তাও তো বুঝছি না। কবে থেকে ঝাড়ুর যোগ্য হয়ে গেলাম তাও তো বুঝছি না। আমরা তো নিজের ঘরেই আছি, নিজেদের কাজই তো করছি। আমরা যতগুলো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি, সবগুলোর অফিস এখানে। এখানে সবগুলো প্রতিষ্ঠানই দেশের জন্য মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি সারাদেশে, নার্সিং কলেজ হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সফলতার মুখ দেখছে, তখন এমন কি হলো যে, বাইরের কিছু লোক এসে বলবে যে, আপনারা এখান থেকে যান, এটা আমাদের অফিস। এটা আমি বুঝতে পারছি না।
ড. ইউনূস বলেন, দেশবাসীর কাছে আমার ফরিয়াদ, আমরা কোথায় যাব, কী করব? কাকে দুঃখের কথা বলব? পুলিশ তো আমাদের কোনো কথা শুনছে না। তাহলে আমরা কার কাছে যাব তাহলে?
এ বিষয়ে আদালতে শরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসার মুনাফার টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় হয়নি। যা হয়েছে আইন মেনে হয়েছে।