‘সারা দিন কারখানায় গ্যাসের চাপ থাকে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে মেশিনের ভেতর কাপড়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। বারবার জেনারেটর চালু করে কাজ করতে হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ইউরোটেক্স নিটিং নিটওয়্যারের ডায়িং সেকশনের শ্রমিক সোহাগ। গ্যাস-বিদ্যুত্সংকটের কারণে বর্তমানে জেলার পোশাক কারখানাগুলোতে এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানির সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কারখানা। এর মধ্যে কলকারখানা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত রয়েছে ২ হাজার ২০০টি। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ তাদের আয়-রোজগারে এসব কারখানার ওপর নির্ভরশীল।
সরেজমিন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ইউরোটেক্স নিটওয়্যার এবং আইএফএস টেক্সওয়্যার ঘুরে দেখা যায়, সুইং, নিটিং, প্যাকেজিং, ডায়িংসহ বেশ কয়েকটি সেকশনের একাধিক লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ করে রাখা মেশিনগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ইউরোটেক্স কারখানার শ্রমিকরা বলছেন, মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে সুইং সেকশনের লাইন ১২৫ থেকে নেমে ৮৫ তে এসে ঠেকেছে। এছাড়া ডায়িং সেকশনে গ্যাসের অভাবে মেশিন বন্ধ করে রাখা, প্যাকেজিং সেকশনে পর্যাপ্ত কাজ না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একই চিত্র আইএফএস টেক্সওয়্যারে। প্রায় ২২ টন ধারণক্ষম ডায়িং-এ বর্তমানে কাজ চলছে সাত থেকে আট টন কাপড়ের। সেটুকুও নির্ভর হয়ে পড়েছে ডিজেলের ওপর। বাজারে এলএনজিসংকট চলায় বাধ্য হয়ে বাড়তি দামের জ্বালানি ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। প্রতিদিন অন্তত ২ লাখ টাকার কেবল ডিজেলই কিনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান চালু রাখার জন্য। এছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে অন্যান্য বাড়তি খরচ তো আছেই। কারখানার ভেতরের নিটিং সেকশনে কাজ নেই বললেই চলে। কেবল গার্মেন্টস সেকশন চালু রেখে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইউরোটেক্স টেক্সওয়্যারের সিইও শামীম ইসলাম বলেন, আমাদের গ্যাসের যে প্রেশার সেটা সবসময় ৫০ শতাংশের কম থাকে, মাঝেমধ্যে সেটা ২০ শতাংশে এসে ঠেকে। ফলে আমাদের ডায়িং সেকশন চালিয়ে রাখার জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১১ লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে। ফলে একই সঙ্গে আমার গ্যাসের বিল এবং ডিজেলের বিল দুটোই চালিয়ে নিতে হচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য বাড়তি খরচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদের বিপুল পরিমাণ শ্রমিককে বেকার বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের তিনটি ইউনিট চলে। নিট, ওভেন ও সোয়েটার। বর্তমানে সোয়েটার অর্ডার প্রায় বন্ধ সারা দেশে।
এ বিষয়ে বিকেএমইএর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমাদের অধিকাংশ শ্রমিক পিস রেটে কাজ করেন। কারণ বেতনের চাইতে পিস রেটে আয় বেশি হয়। এখন যেহেতু কাজ নেই, তাই নো ওয়ার্ক নো মানি অবস্থা। এরপরও ন্যূনতম বেতন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক পণ্য রেডি কিন্তু বায়ার নিচ্ছে না। তারা বলছে দুই মাস পরে পাঠাও। টাকা আটকে আছে। অনেকে পণ্য নিলেও ছয় মাস পরে পেমেন্ট দেবে। আমাদের ব্যাংকের ইন্সটলমেন্ট আটকে আছে। আমাদের জ্বালানি খরচ বেড়েছে। টোটাল গার্মেন্টস সেক্টর এখন বিপদের মুখে।
শিল্পাঞ্চলে চলমান গ্যাস সংকটের সমাধান কবে হবে—জানতে চাইলে তিতাসের ফতুল্লা আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন বলেন, চলমান গ্যাস ও বিদ্যুত্সংকট জাতীয় সমস্যা। বিদ্যুৎ সেক্টরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টে গ্যাস ব্যবহার করায় গ্যাস সেক্টরে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলমান সংকট মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে কারণে শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাসের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।