ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে ইউরোপে শীতকালে জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে৷ বাড়ছে গ্যাসের জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তা৷ নেদারল্যান্ডসের এক গ্যাস ক্ষেত্রের আশেপাশের মানুষ অবশ্য অন্য সমস্যায় ভুগছেন৷ ইয়ান মুনেকের বাসায় বেশ কয়েক বছর ধরে মেরামতির কাজ চলছে৷ ভূমিকম্পে বাড়িটির বেশ ক্ষতি হয়েছিল৷ সেই অংশ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভবনের এই অংশের মেরামতি হয়ে গেছে৷ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ভারি লোহা ভবনের প্রাচীর ও ভেতরের কাঠামো ধরে রেখেছে৷”
তবে বাড়ির অন্য একটি অংশ পুরোপুরি ভেঙে ফেলতে হয়েছে৷ আবার নতুন করে সেটি গড়ে তুলতে হবে৷ রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের কারণে কয়েক দশক ধরে গ্রোনিঙেনে ভূকম্পন ঘটে চলেছে৷ ২০১২ সালে জোরালো ভূমিকম্প বাড়িটির ক্ষতি করেছে৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইয়ান বলেন, ‘‘সেটা ছিল ভয়ঙ্কর এক ঘটনা৷ সবকিছু নড়তে শুরু করলো, বিকট শব্দ হচ্ছিল৷ তারপর বোমা ফাটার মতো শব্দ শোনা গেল৷”
এমন বিপর্যয়ের পর এখনো পর্যন্ত এক লাখ ষাট হাজারেরও বেশি বাড়ির মালিক ক্ষতিপূরণের দাবি পেশ করেছেন৷ এমন পরিস্থিতিতে নেদারল্যান্ডসের সরকার গ্যাস উত্তোলনের মাত্রা কমিয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে গ্যাস ফিল্ড পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ কিন্তু ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার জের ধরে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন সব হিসেব গোলমাল করে দিয়েছে৷ নেদারল্যান্ডসের সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে, যে শীতকালে গ্যাসের অভাব দেখা দিলে গ্যাস ফিল্ডে মজুদ গ্যাস ব্যবহার করা হতে পারে৷
মাখিয়েল মুল্ডার গ্রোনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ৷ তার মতে, গ্যাস ক্ষেত্রে উৎপাদন সাময়িক ভিত্তিতে বাড়ানো অবশ্যই সম্ভব৷ স্থানীয় বাসিন্দারাও সম্মতি দিতে পারেন৷ মুল্ডার মনে করেন, ‘‘গ্রোনিঙেনে গ্যাস উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে বিশাল মুনাফা করা যায়৷ সেই অর্থের সামান্য অংশ দিয়ে গ্রোনিঙেন অঞ্চলের বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা সম্ভব৷ ভূকম্পনের ঝুঁকি অবশ্য মেনে নিতে হবে৷ কারণ এখনো ভূমিকম্প হয়ে চলেছে৷ সবার জন্যই সেটা সেরা সিদ্ধান্ত হতে পারে৷”
মারিয়ান টোরি অবশ্য এমন সব প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, তা-ও দ্রুত হাতে পাওয়ার আশা – এমন অভিজ্ঞতা তার আগে কখনো হয়নি৷ অন্যান্য অনেক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকের মতো তিনিও কর্তৃপক্ষের কাছে গ্যাস উত্তোলনের কারণে ক্ষতির মাত্রার স্বীকৃতি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন৷ প্রয়োজনে বাড়ি ভেঙে ফেলতেও তারা প্রস্তুত৷ নতুন ভূকম্পনের ফলে ক্ষতির মাত্রাও বেড়ে চলেছে৷ মারিয়ান বলেন, ‘‘এমন ক্ষয়ক্ষতির শেষ নেই৷ ফলে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন৷ পরের ভূমিকম্পে তাঁরা ছাদ ভেঙে বিম মাথায় পড়ার আশঙ্কা করছেন৷”
গ্যাসের বিষয়টি নেদারল্যান্ডসে ভবিষ্যতে জ্বালানির সরবরাহ নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করছে৷ সবুজ দলের স্থানীয় রাজনীতিক জাস্টিন জোনস বর্তমান সংকটকে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার আরো বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখছেন৷ তিনি গ্রোনিঙেনের গ্যাস ক্ষেত্র পাকাপাকিভাবে বন্ধ করার পক্ষে সওয়াল করছেন৷ জাস্টিন বলেন, ‘‘জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি সংগ্রহের মূল্য কম নয়৷ মানুষ ও প্রকৃতিকেও সেই মূল্য চোকাতে হচ্ছে৷ গ্যাস বন্ধ করলে আর ভূমিকম্প হবে না বলে মানুষ মনে করছে৷ কিন্তু সরকারের স্থির করা মেয়াদ মেনে চললেও একটা সমস্যা থেকে যাবে৷ গ্যাস উত্তোলনের মেয়াদ মোটেই বাড়ানো উচিত হবে না৷ অন্যথায় তার পরিণতি চলতেই থাকবে৷”
রাষ্ট্র হিসেবে নেদারল্যান্ডস ও গ্যাস ক্ষেত্রের মালিক কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ১০০ কোটি ইউরো হস্তান্তর করেছে৷ এখানকার কোনো বাসিন্দাই গ্যাস উত্তোলনের মেয়াদ বাড়াতে চান না৷ কিন্তু নেদারল্যান্ডসের সরকারের সামনে শীতকালে গ্যাস সংকট এড়ানোর অন্য কোনো পথ খোলা নেই৷