রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৩০ আগস্ট ক্ষমতা দখল করে মধ্য আফ্রিকার দেশ গ্যাবনের সেনাবাহিনী। ওইদিন প্রেসিডেন্ট আলী বোঙ্গো ওনদিম্বাকে উৎখাত ও গৃহবন্দি করা হয়।
অভ্যুত্থানের মাত্র চারদিন আগে গ্যাবনে নির্বাচন হয়। ব্যাপক জালিয়াতি ও কারচুপির ওই নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হন আলী বঙ্গো। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ হওয়ায় সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেয়। এরমাধ্যমে গ্যাবনে বঙ্গো পরিবারের দীর্ঘ ৫৬ বছরের শাসনের অবসান হয়।
তবে গ্যাবনের বিরোধী দলের নেতা আলবার্ট ওন্দো ওসা দাবি করেছেন, এটি কোনো সামরিক অভ্যুত্থান নয়। এটি মূলত ৫৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বঙ্গো পরিবারের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের মাধ্যমে কথিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আলী বঙ্গোকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেছেন, এ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছেন আলী বোঙ্গোর বোন পাসকালিন বোঙ্গো। আর সেনাবাহিনী যাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং যার নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়েছে সেই জেনারেল ব্রাইস ওলিগুই এনগুয়েমার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আলী বঙ্গোর রক্তের সম্পর্কে ভাই (কাজিন) হন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্যাবনের বিরোধী দলীয় এ নেতা এসব দাবি করেছেন।
যদিও অভ্যুত্থানের পরপরই অনেক মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন এবং আনন্দ-উল্লাস করেন। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘গ্যাবনের মানুষ অবশেষে সুখের পথে এসেছেন।’
তবে বিরোধী দলীয় নেতা আলবার্ট ওন্দো ওসা বলেছেন, সাধারণ মানুষ প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতে না পেরে আনন্দ-উল্লাস করেছেন। কিন্তু তারা কয়েকদিন পরই সব বুঝতে পারবেন।
ক্ষমতা দখল করা জেনারেল ব্রাইস ওলিগুই এনগুয়েমাকে ‘ছোট বঙ্গো’ হিসেবে অভিহিত করে আলবার্ট ওন্দো বলেছেন, জেনারেল এনগুয়েমা ছোটকাল থেকেই প্রেসিডেন্ট প্যালেসে থাকেন।
তিনি বলেছেন, ‘সে বঙ্গোর কাজিন (ভাই)। তাহলে কীভাবে ভাববেন সে অন্যরকম। এটি প্রেসিডেন্ট প্যালেসের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ। প্যালেসের নিয়ন্ত্রণ এখনো বোঙ্গোর অধীনেই আছে। সে প্যালেসে বড় হয়েছে। এই তরুণ ব্যক্তিকে আমি বোঙ্গোর আত্মীয় হিসেবে চিনি, গ্যাবনের সবাই তাকে চেনে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘মূলত, আমি মনে করি বোঙ্গো পরিবার তাদের পরিবারের এক সদস্যকেই শুধুমাত্র সরিয়েছে। আর তারা চায় বোঙ্গোর শাসন অব্যহত থাকুক। একই সঙ্গে আমাকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চায়। এটি প্যালেসের বিদ্রোহ ছিল, কোনো সামরিক অভ্যুত্থান নয়।
ক্ষমতা দখল করা জেনারেল ব্রাইস ওলিগুই এনগুয়েমার গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন, তারা দ্রুতই নির্বাচন আয়োজন করে বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তবে এতটা দ্রুত নয় যে— দুর্নীতিগ্রস্ত এসব মানুষই আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবে।
এদিকে গ্যাবনের বিরোধী দলীয় নেতা এটিকে প্রাসাদের বিদ্রোহ হিসেবে অভিহিত করলেও, অভ্যুত্থানের পরপরই প্রেসিডেন্ট আলী বোঙ্গোর ছেলে, সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীসভার অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২৬ আগস্ট যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেটিতে প্রধান বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আলবার্ট ওন্দো ওসা। তিনি নির্বাচনে ৩০ শতাংশ ভোট পান বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। তবে আলবার্ট বলেছেন, তাকেই ওইদিন বেশি মানুষ ভোট দিয়েছেন এবং তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। অভ্যুত্থানকারীদের দ্রুত তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছেন তিনি।