যদিও আগামী অক্টোবর মাসে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আবারও চেষ্টা চালানোর কথা জানিয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্ষপথে সামরিক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট পাঠাতে উত্তর কোরিয়ার প্রচেষ্টা দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু স্যাটেলাইট বহনকারী রকেটের তৃতীয় পর্যায়ের সমস্যার কারণে এটি ব্যর্থ হয়।
আগামী অক্টোবর মাসে উত্তর কোরিয়া আবারও সামরিক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চেষ্টা করবে বলেও জানিয়েছে দেশটি।
বৃহস্পতিবারের এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা সম্পর্কে উত্তর কোরিয়া সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) বলেছে, ‘রকেটের প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের উড্ডয়ন স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ের উড্ডয়নের সময় জরুরি ব্লাস্টিং সিস্টেমে ত্রুটির কারণে উৎক্ষেপণটি ব্যর্থ হয়ে যায়।’
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ৫০ মিনিটে সোহাই স্যাটেলাইট লঞ্চিং স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণটি শনাক্ত করে তারা। উৎক্ষেপণের পর রকেটটি ইয়েলো সাগরের ওপর দিয়ে ‘আন্তর্জাতিক আকাশসীমা অতিক্রম করে’।
আল জাজিরা বলছে, এর প্রায় ১০ মিনিট পরে জাপানের ওকিনাওয়ার দক্ষিণতম অঞ্চলের বাসিন্দাদের তাদের বাড়ির ভেতরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার পরামর্শসহ জরুরি সতর্কতা দেওয়া হয়। তবে প্রায় ২০ মিনিট পর তুলে নেওয়া হয় সেই সতর্কতা।
জাপানি সম্প্রচারকারী এনএইচকে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই গোয়েন্দা স্যাটেলাইটের কিছু ধ্বংসাবশেষ ফিলিপাইনের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে থাকতে পারে।
আল জাজিরা বলছে, উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশটির নেতা কিম জং উনের কাছে গোয়েন্দা স্যাটেলাইটটি অগ্রাধিকার হিসেবে রয়েছে। গত মে মাসের শেষের দিকে দেশটি প্রথম দফায় গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালায় এবং সেটি কার্যত বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল।
পরে পিয়ংইয়ংয়ের কর্মকর্তারা এটিকে তাদের ‘গুরুতর ব্যর্থতা’ বলে অভিহিত করেন এবং আবারও গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় চেষ্টা চালায় দেশটি।
অবশ্য জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিরোকাজু মাতসুনো বলেছেন, বারবার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাব এবং সম্ভাব্য কঠোর ভাষায় এই উৎক্ষেপণের নিন্দা জানাব।’
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদও এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের নিন্দা করেছে। তারা বলেছে, পিয়ংইয়ংয়ের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যে প্রস্তাব রয়েছে, সর্বশেষ উৎক্ষেপণের ঘটনা সেটি লঙ্ঘন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, গোয়েন্দা স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ জাতিসংঘের রেজুলেশন লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া ‘হুমকি তৈরি করে এমন আরও কার্যকলাপ চালানো’ থেকে উত্তর কোরিয়াকে বিরত থাকার এবং পিয়ংইয়ংকে কূটনীতিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি।