ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ থেকে টাকা তুলে বের হতেই গোয়েন্দা পুলিশের পোশাক পরিহিত দল হাজির। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তোলা হয় গাড়িতে। কিছু সময় পার হতেই বোঝা যায় আসলে তারা গোয়েন্দা নয়, ছিনতাইকারী। ভুয়া ডিবির এমন ছিনতাই নিয়ে খবর হয় মাঝেমধ্যেই। ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালায় ভুয়া ডিবি পুলিশ। গায়ে ডিবি লেখা জ্যাকেট, হাতে ওয়াকিটকি, হাতকড়া, আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা মুশকিল- তারা আসল, না নকল। তবে এবার বদলে যাচ্ছে ডিবির পোশাক। নতুন পোশাকে যুক্ত থাকছে কুইক রেসপন্স কোড বা কিউআর কোড। সন্দেহ হলেই কেউ ডিবির পোশাকে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে আসল নাকি নকল যাচাই করতে পারবেন। পুলিশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পোশাকে থাকছে কিউআর কোড। চলতি মাসে নতুন পোশাকে ঢাকা মহানগর পুলিশকে মাঠে অভিযানে দেখা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির দক্ষিণ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, বর্তমানে ডিবি পুলিশ যে পোশাক পরে অভিযানে যাচ্ছে তা অনেক প্রতারক চক্র বাইরে থেকে তৈরি করে নিরীহ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে। যাতে কেউ এভাবে প্রতারণা করতে না পারে সেজন্য নতুন পোশাক নিয়ে আসা হচ্ছে। কিউআর কোড ছাড়াও পোশাকে এমন কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকছে যার কারণে সহজে জালিয়াতি করা সম্ভব হবে না। চলতি মাসেই এই পোশাক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মধ্যে সরবরাহ করার চেষ্টা হচ্ছে। অপহরণ, ছিনতাইসহ যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা ঠেকাতে সাদা পোশাকে অভিযানে না যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের। শৃঙ্খলা বাহিনীতে সাদা পোশাক বলতে বোঝায় ইউনিফর্ম ছাড়া অন্য যে কোনো ধরনের সাধারণ পোশাক। বিভিন্ন সময় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের অপারেশনাল অভিযান চালানোর ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে বলা হয়। দেশের সব জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো বাহিনীকে সাদা পোশাকে অভিযান চালাতে দেখলে পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া মাইক্রোবাসে অস্বচ্ছ কাচ ব্যবহারও বন্ধ করতে হবে। সাদা পোশাকে কোনো অভিযান চালাতে দেখামাত্র যারা অভিযান চালাচ্ছে তাদের বৈধ কোনো কাগজপত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
পুলিশের নির্দেশনায় এও বলা হয়, সাদা পোশাকে পুলিশের টহল দেওয়া যাবে না, জ্যাকেট বা কটি থাকতে হবে। যারা গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন, তারা সাধারণত সাদা পোশাকে অফিস করা ও চলাফেরা করতে পারেন। তবে অভিযানে যাওয়ার সময় গোয়েন্দারা সাদা পোশাকের ওপর ডিবি লেখা জ্যাকেট পরে থাকেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে এ ধরনের জ্যাকেট পরেই অভিযান চালিয়ে আসছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময় ডিবির জ্যাকেটের মতো হুবহু পোশাক ভুয়া ডিবির সদস্যদের কাছে পাওয়া গেছে।
ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন পোশাকে বুকের ওপরই থাকবে কিউআর কোড। পোশাক তৈরিতে এমন কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে তা শীত ও গরমে ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া পোশাকে এক ধরনের বিশেষ রং থাকবে যার বিচ্ছুরণ থেকে আসল-নকল পুলিশের পার্থক্য ধরা যাবে। এমনকি বিশেষ ধরনের কাপড় দিয়ে এই পোশাক তৈরি করা হচ্ছে যাতে এটি বাজারে পাওয়া না যায়। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, অনেক সময় আসল পুলিশকেও অভিযানের সময় নিয়মকানুন অমান্য করতে দেখা যায়। কোনো বিশেষ কারণে ডিবির আভিযানিক ড্রেস পরা বিপজ্জনক হলেও তাকে ওই পোশাক সঙ্গে রাখতে হবে। আসামি গ্রেপ্তারের পর কোনো প্রশ্ন উঠলে যাতে তার পোশাকের কিউআর কোড দেখাতে পারেন।