গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতীক পেয়ে প্রথম দিনেই জমজমাট প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডেই শুরু হয়েছে প্রচারযুদ্ধ। টানা দুই সপ্তাহ চলবে এই জমজমাট প্রচার-প্রচারণা।
মঙ্গলবার (৯ মে) সকাল ১০টায় শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে অবস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতীক বরাদ্দ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। এসময় মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়াও তাদের কর্মী সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
১০টার কিছু পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়। বাংলা বর্ণক্রমানুসারে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের হাতে তুলে দেন। এসময় আটজন মেয়র পদপ্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি, জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন লাঙ্গল, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহানূর ইসলাম রনি হাতি, ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান হাতপাখা, জাকের পার্টির মো. রাজু আহমেদ গোলাপ ফুল, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম মাছ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ ঘোড়া প্রতীক বরাদ্দ পান।
প্রতীক বরাদ্দের আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালানোর অনুরোধ করেন।
এসময় তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে সিসিটিভি থাকবে, আপনারা যদি কেউ অন্যরকম চিন্তা করে থাকেন, মনে অন্যায় কোনো দাবি নিয়ে বসে থাকেন, তাহলে সেটি পূর্ণ হবে না। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার হবে, বিভিন্ন স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে।
বেলা সাড়ে ১১টায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন প্রতীক নিতে আসেন। এসময় বড় ছেলে, গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গে ছিলেন।
প্রতীক পাওয়ার পর জায়েদা খাতুন বলেন, লটারিতে টেবিল ঘড়ি মার্কা পেয়েছি। আমি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সবার কাছে ভোট চাই। আপনারা গাজীপুর সিটি করপোরেশন উন্নয়নের জন্য ঘড়ি মার্কায় ভোট দিন। আমি লড়াই করছি জনগণের জন্য। আমার সাথে সিটি করপোরেশনের জনগণ রয়েছে। আমি আমার এবং ভোটারের নিরাপত্তা চাই। আমি নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটা সুষ্ঠু ভোট চাই।
নির্বাচনে জয়লাভ করলে কী করবেন এমন প্রশ্নে জায়েদা খাতুন বলেন, এই শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা। আমি জয়লাভ করলে আগে এই রাস্তা ও ড্রেনেজ ঠিক করব।
এ সময় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তর করতে চেয়েছিলাম। সেই কাজে হাতও দিয়েছিলাম। আমার মায়ের নির্দেশেই এই ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা করেছিলাম। এখন মা যখন দেখেছে কাজগুলো থেমে গেছে তখন মা আমাকে হুকুম করে বলেছেন, বাবা আমি কাজগুলো করতে চাই। এজন্য মায়ের কথায় এই শহরকে সুন্দর রাখতে মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছি।
নৌকার প্রতীক পেয়ে আজমত উল্লা খান বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী, আমার মার্কা নৌকা। এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে বারবার জনগণ নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আজ প্রতীক বরাদ্দের পর আমি এবং আমার দলের নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় নামব।
আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরবাসীর উন্নয়নে এটিকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করেছিলেন। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিগত দিনে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করা হয়নি। আমি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান করব, একটি সমৃদ্ধ, অবকাঠামোগত উন্নত, দুর্নীতিমুক্ত এবং পরিচ্ছন্ন সিটি করপোরেশন গড়তে আপনারা পাশে থাকবেন।
এদিকে, প্রতীক বরাদ্দের পর নগরে শুরু হয়েছে প্রচার প্রচারণা। এলাকায় এলাকায় সাঁটানো হয়েছে ব্যানার, পোস্টার। এছাড়া মাইকিং করে শহরের অলিগলিতে প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছে। গণসংযোগসহ বিভিন্ন মিছিল, মিটিং ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আটজন মেয়র প্রার্থী, ২৩৯ জন কাউন্সিলর ও ৭৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুর। ঢাকার পাশে গুরুত্বপূর্ণ এই সিটিতে প্রথমবার ভোট হয় ২০১৩ সালে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লা খান পরাজিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে। তবে ২০১৮ সালে এই সিটির দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে পরাজিত হন ধানের শীষের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার।