সোমবার সকাল ১১টা। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানি আলিম মাদ্রাসা মহিলা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত তৎপরতা। কেন্দ্রের প্রবেশমুখে ঝুলছিল করোনা পরিস্থিতিতে সাত দফা নির্দেশনাযুক্ত নির্বাচন কমিশনের ব্যানার। ওই সাত দফার অন্যতম ছিল ‘ভোট কেন্দ্রে মাস্ক পরে প্রবেশ, পরস্পর তিন ফুট দূরত্বে লাইনে দাঁড়ানো, ভোটকক্ষে কেবল একজন ভোটারের প্রবেশ এবং প্রবেশের পর নির্বাচন কর্মকর্তার ভোটারের হাত জীবানুমুক্ত করা’। কিন্তু কেন্দ্রে প্রবেশ করে দেখা যায় উল্টো চিত্র। গাদাগাদি করে সারিতে দাঁড়িয়ে ভোটারা। অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। একাধিক ভোটার ভোটকক্ষে ঢুকছিলেন, জীবাণুমুক্ত না করেই নেওয়া হচ্ছিল ভোট।
ছাতিয়ানি আলিম মাদ্রাসা মহিলা ভোটকেন্দ্রের ২ নম্বর বুথের নির্বাচন কর্মকর্তার মো. ইমতিয়াজ হোসেনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে কথা হলে বলেন, ‘এ বুথে ভোটার প্রায় সাড়ে তিন শ। বাইরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। একজন একজন করে প্রবেশ করলে এবং হাত জীবানুমুক্ত করতে গেলে ভোটগ্রহণে বিলম্ব হয়। ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে বেগ পেতে হয়। দ্রুত ভোট নেওয়ার জন্য কিছু নির্দেশনা মানা যাচ্ছে না। তাছাড়া ওই বুথে ৫০ মিলির যে স্যানিটাইজারটি দেওয়া হয়েছিল তা ১৫-২০ জনের হাতে ব্যবহারের পরই ফুরিয়ে গেছে।’
কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মো. গুলজার হোসেন বলেন, ‘সরকার মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু কেউ মাস্ক ব্যবহার করে না। আমরা জোর করে কিছু করতে পারি না। তাছাড়া আমাদের দেশের ওপর আল্লাহর রহমত আছে। আমাদের কিছু হবে না।’ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর কেন্দ্রে পাঁচটি বুথে মোট ভোটার এক হাজার ৭০৭ জন। তাঁর জন্য একটিসহ নির্বাচন কমিশন পাঁচ বুথের জন্য ৫০ মিলির ছয়টি স্যানিটাইজার সরবরাহ করেছে। প্রতিবুথে ভোটার সংখ্যা প্রায় পৌনে ৪০০। তিনি বলেন, ‘৫০ মিলির একটি স্যানিটাইজার এত ভোটারের জন্য খুবই অপ্রতুল। ভোটগ্রহণের আধা ঘণ্টার মধ্যে স্যানিটাইজার শেষ হয়ে গেছে। ভোটারদের দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুই-একজন নিয়ম ভঙ্গ করে থাকতে পারে।’
একই চিত্র দেখা গেছে পাশের ছাতিয়ানি আলিম মাদ্রাসা পুরুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে। এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৮৭৯ জন। প্রিসাইডিং অফিসার উজ্জল কুমার শীলও বলেন, ‘অপ্রতুল স্যানিটাইজারের কারণে নির্দেশনা অনুযায়ী হাত জীবানুমুক্ত করা যায়নি। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি যাতে ভোটাররা মাস্ক পরে দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়।’
জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের নরুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্র, আজমতপুর আদর্শ কলেজ পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্র, বক্তারপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্র, সাতানীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্র এবং জামালপুর ইউনয়নের চুপাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্রে গিয়েও দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।
ছাতিয়ানি গ্রামের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী (৬৫) বলেন, ‘শিল্প জেলা হওয়ায় গাজীপুর করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। নির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। নির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে তার দায় নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।’ গতকাল সোমবার কালীগঞ্জের তুমুলিয়া, বাহাদুরশাদী, জাঙ্গালিয়া, মুক্তারপুর, বক্তারপুর ও জামালপুর ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে তুমুলিয়া বাহাদুরশাদীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ওই দুই ইউনিয়নে শুধু মেম্বার পদে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কথা হয় জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। ভোটকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই-একটি বুথে দূরত্ব বজায় না রেখে লাইনে দাঁড়ানোর ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তার পরও সকল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য আবারও নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত কোনো প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেননি।’ গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ বুথে দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ভোটাররা। কিছু কিছু স্থানে নারীরা দূরত্ব বজায় না রেখে দাঁড়ালেও তাঁরা বোরকা পরা অবস্থায় ছিলেন। বোরকায় শরীর ও মুখ ঢাকা থাকায় তাঁরা ঝুঁকিমুক্ত ছিলেন।’