ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনগুলো স্পষ্টভাবেই বলছে যে, গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘণ করছে ইসরায়েল। এরপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের সহায়তা নিয়ে ইসরায়েলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ভোট না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মুসলিম আমেরিকানরা।
মঙ্গলবার মিশিগান, ওহাইয়ো ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর ডেমক্রেটিক নেতাদের নিয়ে গঠিত ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল বাইডেনের প্রতি যুদ্ধবিরতি কার্যকরে নিজের প্রভাব কাজে লাগাতে আহ্বান জানান। খবর রয়টার্সের।
এ নিয়ে ‘২০২৩ সিজফায়ার আলটিমেটাম’ শিরোনামের এক খোলা চিঠি লিখেছেন মুসলিম নেতারা। সেখানে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, যেসব প্রার্থী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আক্রমণে সমর্থন দেবেন, তাদের পক্ষে ভোট, সমর্থন, সহায়তা সব বন্ধ করে দিতে মুসলিম ভোটারদের মধ্যে প্রচার চালাবেন তারা।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশা ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ এই খোলা চিঠি।
খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের নিঃশর্ত সমর্থন, বিপুল অনুদান ও অস্ত্রশস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ভোটারদের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে।
মিনেসোটার ফিলিস্তিনি আমেরিকান আইনপ্রণেতা রাশিদা লাইব সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ৯০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন দিতে বাইডেনকে আহ্বান জানিয়েছেন। ওই ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ না করলে ‘২০২৪ সালে আমাদের ভোট পাওয়ার আশা রাখবেন না’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে বাইডেনের জন্য মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ২০২০ সালে মিশিগানের ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট মাত্র ২.৬ শতাংশ ব্যবধানে জিতেছিলেন বাইডেন।
বুধবার মিনেসোটা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে বাইডেনের। ওই রাজ্যের মুসলিম আমেরিকানরাও যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একই আলটিমেটাম দিয়েছেন।
স্যাক্রামেন্টো ভ্যালি কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-এর (সিএআইআর) মিনেসোটার নির্বাহী পরিচালক জায়লানি হুসেইন বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে অন্যান্য রাজ্যের মুসলিম ভোটাররাও একই দাবি জানাবেন।
হুসেইন বলেন, ‘আমরা আশা করছি, উইসকিনসিন, ওহাইয়োসহ অন্যান্য রাজ্যও এ সপ্তাহে একই দাবি জানাবে।’
তিনি বলেন, যুদ্ধ থামাতে না বললে ২০২৪ সালে বাইডেনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না তার। ২০২০ সালের নির্বাচনে ৭০ শতাংশ মুসলিম আমেরিকান বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৩ হাজার ৫৪২ জন শিশু। নিহত নারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া এ বর্বর হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ২১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হয়েছেন।
এর আগে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল ৫৩টি গণহত্যা চালিয়েছে।
ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত গাজা। সেখানে তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের কারণে খাবার, পানিসহ জরুরি পণ্যের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় গর্ভবর্তী নারী, শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ লবণাক্ত ও দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।