ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় স্থল অভিযানে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৫৬ সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া আল সিনওয়ার দাবি করেছেন যে, গাজায় প্রায় ১৭০০ ইসরায়েলি সেনার মৃত্যু হয়েছে। অবরুদ্ধ উপত্যকায় ধ্বংস হচ্ছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে প্রথমবারের মতো বিশ্বের সামনে বিবৃতি দিলেন শীর্ষ এই হামাস নেতা। সেখানে তিনি বলেন, হামাস ইসরায়েলের সাথে ‘অভূতপূর্ব যুদ্ধের’ মুখোমুখি হচ্ছে।
সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সিনওয়ারের চিঠি প্রকাশ করে। তিনি বলেছেন, হামাস ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি ভয়ঙ্কর, সহিংস এবং নজিরবিহীন যুদ্ধ করছে। গাজায় দখলদার সেনাবাহিনীর জীবন ও সরঞ্জামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
হামাসের শীর্ষ এই নেতা বলেছেন, হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে এবং তারা ইসরায়েলের শর্তের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
তবে ইসরায়েলি বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, গাজায় স্থল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত তাদের ১৫৬ সেনা নিহত এবং ৬০০ জন আহত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো আইডিএফের দাবির সঙ্গে হাসপাতালে নথিভুক্তির তথ্যে গড়মিল দেখেছে। তারা জানিয়েছে, আইডিএফের দেওয়া তথ্যের চেয়ে বেশি সংখ্যক সেনা হাসপাতালে এসেছে।
ইসরায়েলের ওয়াই-নেট নিউজ ওয়েবসাইট বলেছে, গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা কমপক্ষে পাঁচ হাজার ইসরায়েলি সৈন্যকে আহত করেছে। তাদের মধ্যে অনেকে মারাত্মক আহত হয়ে অক্ষম হয়ে গেছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন বিভাগের প্রধান লিমোর লুরিয়া বলেছেন, ‘আমি কখনই এমন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি। আমরা যে সব ইসরায়েলি সেনাকে গাজা থেকে আহত অবস্থায় ইসরায়েলে নিয়ে আসি, তাদের ৫৮ শতাংশের বেশির হাত ও পায়ে গুরুতর আঘাত রয়েছে। এসব সেনার হাত-পা কেটে ফেলতে হতে পারে।’
সিনওয়ার জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধের কৌশল ব্যবহার করছে। তারা স্নাইপার, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল এবং বিস্ফোরক ডিভাইস, ট্যাঙ্কসহ অন্তত ৭৫০টি ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। সেই সময়েই এমন চিঠি লিখলেন হামাসের অন্যতম নেতা সিনওয়ার।
ইসরায়েল যুদ্ধে আরেকটি অস্থায়ী বিরতির প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে, যার মধ্যে কিছু ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে একদল ইসরায়েলিকে গাজা থেকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
হামাস প্রকাশ্যে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, বলেছে যে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ করতে এবং গাজায় মানবিক সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে কোনও বন্দী বিনিময় হবে না।
হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি দলগুলো নিয়মিতভাবে ইসরায়েলি অবস্থানে তাদের হামলার ভিডিও প্রকাশ করে। এর মধ্যে যুদ্ধের সময় জব্দ করা ইসরায়েলি অস্ত্র ও গোলাবারুদের ছবি রয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, স্থল অভিযানে গিয়ে তারা হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং অনেক টানেল ধ্বংস করেছে। তবে সেই দাবির বিষয়ে বা নিজেদের বড় কোনো ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেনি হামাস।
হামাসের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা হলেন সিনওয়ার। তিনি এখনও গাজায় অবস্থান করছেন। তিনি ইসরায়েলের বাহিনীকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সিনওয়ারকে খুঁজতে তৎপরতা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করে যে, তারা সিনওয়ারকে ধরার কাছাকাছি ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে ধরতে পারেনি তারা।
ইসরায়েলের বিশ্বাস, গাজার নিচে টানেলে অবস্থান করছেন সিনওয়ার। ৭ অক্টোবরের পর থেকে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ইসরায়েলি বাহিনী তাকে ধরার জন্য ৪ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে এবং গাজায় এ বিষয়ে লিফলেট আকাশ থেকে ফেলে।
শুক্রবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন যে, আইডিএফ ধীরে ধীরে উত্তর গাজায় তাদের উদ্দেশ্য সম্পন্ন করছে। সিনওয়ার শিগগিরই আমাদের বন্দুকের নিচে আসবে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে ২৫০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে মাগাজি শরণার্থী শিবিরেই শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে তারা। এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৩০ বিমান ও ২০ জাহাজে ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এখন পর্যন্ত গাজায় ২০ হাজার ৫০০ এর বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বলা বাহুল্য, তাদের প্রায় সবাই বেসামরিক ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে ৯ হাজারের বেশি শিশু এবং বাকিদের বেশিরভাগই নারী।