এই পরিস্থিতিতে গাজার ফিলিস্তিনিরা ‘মারাত্মক বিপদের’ মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার মানুষ ‘গুরুতর বিপদের’ মধ্যে রয়েছেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বুধবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এসময় তিনি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই ফিলিস্তিনি অঞ্চলজুড়ে তীব্র ক্ষুধা ও হতাশার কথাও উল্লেখ করেন।
ডব্লিউএইচও বলেছে, তারা গত মঙ্গলবার গাজার দুটি হাসপাতালে সহায়তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। গাজা উপত্যকার ৩৬ টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৫টি হাসপাতাল বর্তমানে কাজ করছে।
এএফপি বলছে, গাজার ফিলিস্তিনিরা যে গুরুতর বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন তা দূর করতে এবং ভয়ানক আঘাত, তীব্র ক্ষুধা ও রোগের গুরুতর ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে সাহায্য করার পাশাপাশি মানবিক কাজে অংশ নেওয়া কর্মীদের সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলার বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।
এক বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ‘ক্ষুধার্ত লোকেরা আজ আবারও খাবার পাওয়ার আশায় আমাদের কনভয়গুলোকে থামিয়ে দিয়েছে’ বলে আমাদের কর্মীরা জানিয়েছেন। মানুষের ক্ষুধা ও হতাশার কারণে হাসপাতালগুলোতে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং জ্বালানি সরবরাহ করার বিষয়ে ডব্লিউএইচও-এর সক্ষমতা ক্রমবর্ধমানভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি নারী ও শিশু।
আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।
টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, ‘অবিলম্বে গাজার সকল অঞ্চলে আরও বেশি খাদ্য পৌঁছানোর ওপরই আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা এবং চলমান কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা নির্ভর করছে।’
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া একটি রেজুলেশনে ‘নিরাপদ এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের’ আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়নি।
টেড্রোস বলছেন, পাস হওয়া প্রস্তাবটি গাজার মধ্যে মানবিক সহায়তা বিতরণে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে বলে মনে হচ্ছে। তবে ঘটনাস্থলে থাকা ডব্লিউএইচও-এর প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুসারে, এই প্রস্তাব দুঃখজনকভাবে এখনও সেখানে তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি।
তার ভাষায়, ‘বেসামরিকদের আরও সহিংসতা থেকে বাঁচাতে এবং পুনর্গঠন ও শান্তির দিকে দীর্ঘ পথে যাত্রা শুরু করার জন্য আমাদের সেখানে জরুরিভাবে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।’