ভয়াবহ মানবিক সংকটে গাজা। এখানে এমন কোনো স্থান নেই যেটি নিরাপদ। হাসপাতাল, জাতিসংঘের স্কুল এবং শরণার্থী ক্যাম্পগুলোও ইসরায়েলের বর্বর হামলার শিকার হচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় পানি, বিদ্যুত্ ও খাবার নেই। পরিস্থিতি এমন যে গাজাকে গলা টিপে হত্যা করছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় দিনের মতো স্থল অভিযান চালিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাহিনী। স্থল ও বিমান হামলায় ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৪৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংশয় প্রকাশ করলেও জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, নিহতের সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচেই হাজার মানুষের মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে তারা ধারণা করছেন।
‘গাজাকে গলা টিপে হত্যা’
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিন জানিয়েছেন, খাবার, পানি এবং চিকিত্সা সরঞ্জামের অভাবে অনেক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হবে। গত ২১ দিন ধরে গাজায় একটানা বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি বলেন, ইসরায়েল গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে সামষ্টিক শাস্তি দিচ্ছে ইসরায়েল। এর বেশির ভাগই শিশু এবং নারী। ১১৯টি ট্রাক গাজায় ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করেছে। কিন্তু এই ত্রাণ প্রয়োজনের খুবই অপ্রতুল বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতের যে সংখ্যা দিয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচও জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। যদিও প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছিলেন, ফিলিস্তিনের দেওয়া নিহতের সংখ্যা তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। নিহতের সংখ্যা আরো কম বলে তিনি জানান।
গাজায় ঠিক কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক তথ্য দেওয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, তাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তা থেকে মনে করা হচ্ছে, এখনো হাজার মৃতদেহ মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে। গতকাল পর্যন্ত গাজায় ৭ হাজার ৩২৬ জন ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে ৩ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায়ই নিহত হয়েছে ৪৮১ জন। এদিকে গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মধ্য গাজার জঙ্গি ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চলেছে। হামাসের প্রচুর ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। সেই সঙ্গে হামাস সদস্যরাও নিহত হয়েছেন। অভিযান শেষ করে ইসরায়েলে ফিরেছে বাহিনী। অভিযানের একটি নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বিভাগ।
হামাস নির্মূলে নতুন পরিকল্পনা
গাজায় হামাস যোদ্ধাদের উত্খাত করতে নতুন পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ গাজা উপকূলের একাংশ ইসরায়েল নৌবাহিনীর দখলে রয়েছে। তারা হামাসের টানেল ধ্বংসে পানি ভরে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভূমধ্যসাগর থেকেই এই পানি আনা হবে। তবে এসব সুড়ঙ্গ ধ্বংসে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে চিন্তায় আছে। কারণ এই সুড়ঙ্গে হামাসের অস্ত্র, বিস্ফোরক, জ্বালানি এবং খাদ্যের মজুতও রয়েছে। এদিকে হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি না হলে তারা আর কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেবে না।
ইরানের দুই স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলা
সংঘাতপূর্ণ সিরিয়ায় ইরানসংশ্লিষ্ট দুটি স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষাবিষয়ক সদর দপ্তর পেন্টাগন এমন দাবি করেছে। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীর হামলার জেরে তেহরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস ও ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ব্যবহূত স্থাপনায় এমন হামলা চালানো হয়। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক বিবৃতিতে বলেন, ১৭ অক্টোবর ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মার্কিন সেনাদের ওপর ধারাবাহিকভাবে যেসব হামলা চালিয়েছে, তার জবাবে এসব হামলা চালানো হয়েছে। পরিকল্পিত হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে হোয়াইট হাউজ ঘোষণা করে যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ‘সরাসরি বার্তা’ পাঠিয়েছেন জো বাইডেন।